যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকায় গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরতা কমিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করতে গড়িয়ায় জল শোধন প্লান্ট তৈরি করছে কলকাতা পুরসভা। সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পূর্ব-নির্ধারিত সময় ছিল আগামী বছরের পুজো। কিন্তু, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রকল্প সম্পূর্ণ হওয়ার সময়সীমা এগিয়ে আনলেন পুর কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্লান্ট পরিদর্শনের পরে জানান, প্রকল্প শেষের নয়া সময়সীমা ধার্য হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি। ওই মাসেই প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা। ফিরহাদের কথায়, ‘‘যাতে আগামী গ্রীষ্ম থেকে যাদবপুর, টালিগঞ্জের মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পান এবং গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরতা কমে, তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় শহরে জলস্তর নামার নিরিখে যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকাকে ‘মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ’ (মিডিয়াম রিস্ক জ়োন) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, প্রতি বছর ওই এলাকায় জলস্তর নামার হার ১৩-২০ সেন্টিমিটার। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পানীয় জলের পরিকাঠামো পুরোপুরি গড়ে না ওঠায় ওই এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ এখনও গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরশীল। সেই নির্ভরতা কমিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য গড়িয়ায় দৈনিক এক কোটি গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ৯০ কোটি টাকার এই জল প্রকল্প গ্রহণ করেছে পুরসভা। মেয়র আরও জানান, দ্রুত সেখানে ৩৫০ কোটি টাকার পাইপলাইনের কাজও শুরু হবে।
যদিও বিশ্লেষকদের একাংশ প্রকল্প সম্পূর্ণের সময়সীমা এগিয়ে আনার নেপথ্যে রাজনৈতিক কৌশলই দেখছেন। তাঁদের মতে, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পুরসভা দ্রুত কাজ শেষ করতে চাইছে। যাতে পানীয় জলের অপ্রতুলতা নির্বাচনে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলতে না পারে। এমনিতেই ওই এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, বহু বার পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি।
টালিগঞ্জের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ভোটের ধাক্কায় যদি পরিস্রুত জল পাওয়া যায়, তা হলে তা-ই হোক। এমনিতে তো পুরসভাকে বলে লাভ হয় না।’’ এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘নির্বাচনের আগে প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস— এ সব চিরাচরিত রাজনৈতিক কৌশল। ভোট যত এগিয়ে আসবে, এই কর্মসূচি আরও বাড়বে পুর কর্তৃপক্ষের।’’