দু’জন ‘বিরোধী দলনেতা’র নাম ছাপা হল প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্রে, প্রশ্নের মুখে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানালেন ‘কার্ড বাতিল’
আনন্দবাজার | ২২ আগস্ট ২০২৫
প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্রে দু’জন ‘বিরোধী দলনেতা’র নাম ছাপালেন কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার কলকাতায় এসে তিনটি নতুন মেট্রোপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির যে তালিকা, তাতে ‘বিরোধী দলনেতা’ হিসেবে শুধু শুভেন্দু অধিকারীর নাম নেই। ছাপানো হয়েছে আরও এক জনের নাম। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, ভুল নজরে আসার পরে ওই আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু নতুন আমন্ত্রণপত্র কত ক্ষণে ছেপে আসবে, কখনই বা অতিথিদের কাছে তা পাঠানো হবে, সে বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি।
যে আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বিতর্ক, সেটি নবনির্মিত যশোহর রোড মেট্রো স্টেশনের কর্মসূচির জন্য ছাপা হয়েছিল। শুক্রবার বিকেল ৪টে ১৫ মিনিট নাগাদ যশোহর রোড মেট্রো স্টেশন থেকেই ইয়েলো লাইনের (নোয়াপাড়া-বারাসত) নোয়াপাড়া থেকে জয়হিন্দ বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। ওই স্টেশন থেকেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অরেঞ্জ লাইনের (নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন (রুবি) থেকে বেলেঘাটা স্টেশন এবং গ্রিন লাইনের (সেক্টর ফাইভ-হাওড়া ময়দান) এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে শিয়ালদহ স্টেশন অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। আমন্ত্রণপত্রে উদ্বোধক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামই ছাপানো হয়েছে। তা ছাড়া উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির যে তালিকা রয়েছে, তাতে ন’জনের নাম রয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, রেল প্রতিমন্ত্রী রবনীত সিংহের নাম রয়েছে। এ রাজ্য থেকে মনোনীত দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও সুকান্ত মজুমদারের নাম রয়েছে। আর নাম রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী ও শমীক ভট্টাচার্যের। তাঁদের দু’জনকেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলে লেখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গত মাসেই দুর্গাপুরে একই দিনে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সভা করেছিলেন। দু’টি মঞ্চেই শমীক আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে নন, রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণপত্রেও শমীকের নাম সাংসদ হিসেবেই উল্লিখিত হয়েছিল। শুক্রবার দমদমে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিও একই ধাঁচের। তাই সরকারি আমন্ত্রণপত্রে শমীকের নামের পাশে সাংসদ পরিচয় থাকারই কথা ছিল। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ যে আমন্ত্রণপত্র ছাপান, তাতে সাংসদ পরিচয় নেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি পরিচয়ও নেই। শমীককে বিরোধী দলনেতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি আমন্ত্রণপত্রের এই গলদ মেট্রো কর্তৃপক্ষের জন্য যে অস্বস্তিকর হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এই ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে মেট্রোর কোনও সদুত্তর মেলেনি। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, আমন্ত্রণপত্র ছেপে আসার পর এই ভুল ধরা পড়েছে। তাই সমস্ত কার্ড বাতিল করে নতুন করে ছাপতে দেওয়া হয়েছে। কোনও কার্ড বিলি করা হয়নি বলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তও নতুন আমন্ত্রণপত্র ছেপে আসার খবর পাওয়া যায়নি।
যে আমন্ত্রণপত্র বিলিই করা হয়নি বলে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, তা প্রকাশ্যে এল কী ভাবে? জবাবে মেট্রোর দাবি, একটা কাজে অনেকে জড়িত থাকেন। কী ভাবে এই আমন্ত্রণপত্র বাইরে গিয়েছে তা তাঁদের জানা নেই।