ছেলেকে শোধরাতে পারিনি, আমার কারও প্রতি কোনও অভিযোগ নেই, মধ্যমগ্রাম বিস্ফোরণের ঘটনায় আক্ষেপ নিহতের বাবার...
আজকাল | ২১ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বারবার বলার পরেও শোধরায়নি ছেলে। বলতে গেলে তার হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন মধ্যমগ্রাম বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত সচ্চিদানন্দ মিশ্রর বাবা অশ্বিনীকুমার মিশ্র।
ইতিমধ্যেই দাহ হয়ে গিয়েছে সচ্চিদানন্দর দেহ। দাহ কাজ শেষ হওয়ার পর ফিরে গিয়েছেন অশ্বিনীকুমার। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ-এর আধিকারিকদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তায় তিনি জানান, যে বিবাহিতা মহিলার টানে এরাজ্যের মধ্যমগ্রামে তাঁর ছেলে এসেছিল সেই মহিলার তরফে তাঁকে মাস ছয়েক আগে ফোন করে অভিযোগ করা হয়, সচ্চিদানন্দ ফোন করে ওই মহিলাকে প্রায়ই বিরক্ত করছে। এমনকী ওই মহিলা স্থানীয় পুলিশের কাছেও এবিষয়ে জানিয়েছিলেন। এসটিএফের কাছে অশ্বিনীকুমার জানান, তিনি তাঁর ছেলেকে নিষেধ করেছিলেন সে যেন এপথে আর পা না বাড়ায়। কিন্তু তাঁর ছেলে সেকথা কানে তোলেনি। শেষপর্যন্ত ঘটে গেল এই পরিণতি।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে মধ্যমগ্রামে একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুর পর যথেষ্টই হৈ চৈ হয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পুলিশ জানতে পারে ওই যুবকের কাছেই ছিল বিষ্ফোরক। সে নিজেই 'আইইডি' নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিল। বারাসত জেলা পুলিশের থেকে এই মামলার তদন্তভার নেয় এসটিএফ। তদন্তে উঠে আসে ইনস্টাগ্রামে আলাপ হওয়া এক গৃহবধুর টানেই ভিন রাজ্যের ওই যুবক সচ্চিদানন্দ এরাজ্যে এসেছিল। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশে হলেও ঘটনার আগে সে এসেছিল হরিয়ানা থেকে। সঙ্গে ছিল বিষ্ফোরক। যেটা সে ইউটিউব দেখে বানিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন পরীক্ষা করেই এই ধারণা হয়েছে বলে এক তদন্তকারী জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, নিহত যুবক আইটিআই পাস করেছিল। ফলে ইউটিউব দেখে সে বুঝতে পেরেছিল কীভাবে এই বিষ্ফোরক বানাতে হয়। এরপরেই উঠে আসে মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক গৃহবধুর কথা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায় নিহত যুবকের সঙ্গে তাঁর পূর্ব পরিচিতি থাকলেও পরবর্তী সময়ে তিনি আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি। কিন্তু সচ্চিদানন্দ ক্রমাগত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছিল। বিষয়টি তিনি সচ্চিদানন্দর বাবার কাছেও জানান।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যমগ্রামে এসেছিল সচ্চিদানন্দ। কিন্তু মাঝের তিন দিন পার হয়ে গেলেও দেখা হয়নি ওই গৃহবধূর সঙ্গে। পুলিশের সন্দেহ, হয় সে গৃহবধূর স্বামীকে মারতে এসেছিল অথবা দেখা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে। পাশাপাশি, আরও একটি সন্দেহ পুলিশের মন থেকে দূর হয়নি। তা হল, অসাবধানতাবশত কোনও ক্রমে ভুল বোতামে হাত পড়ে যাওয়ায় এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এসটিএফের একটি সূত্র জানায়, নিহতের বাবা জানিয়েছেন যেদিন সচ্চিদানন্দ এরাজ্যে আসে সেদিনই তিনি তাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আসার কথা চেপে গিয়ে সচ্চিদানন্দ তার বাবাকে জানিয়েছিল সে বেনারসে আছে। গঙ্গাস্নান করে ফিরবে। ছেলের দাহ কাজ করতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য এসটিএফের পক্ষ থেকে অশ্বিনীকুমারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এসটিএফের কর্মী গিয়ে অশ্বিনীকুমার ও তাঁর ছোট ছেলেকে তাঁদের গন্তব্যের ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে এসেছেন। যাওয়ার আগে অশ্বিনীকুমার এসটিএফকে জানান, 'আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই'।