বহু বছর হিসাব জমা দেয়নি ২৩ পুরসভা, সেপ্টেম্বরেই চূড়ান্ত সময়সীমা দিল নবান্ন
হিন্দুস্তান টাইমস | ২০ আগস্ট ২০২৫
কেন্দ্র সরকার সামান্য অজুহাতেই প্রকল্পের টাকা আটকে রাখে এমন অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কড়া নির্দেশ জারি করেছে নবান্ন। অর্থবর্ষের শেষে বার্ষিক হিসেব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আগেই। তবু নিয়ম মানছে না বহু পুরসভা। রাজ্যের ২৩টি পুরসভা বছরের পর বছর কোনও বার্ষিক হিসেব জমা দেয়নি। বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সমস্ত বকেয়া হিসেব জমা দিতে হবে, না হলে প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়া হতে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রতিটি পুরসভাই বছরে কোটি কোটি টাকা প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ পায়। সেই টাকার খরচের বিস্তারিত হিসেব রাজ্যের পুর দফতরে জমা দেওয়ার পাশাপাশি পাঠানো হয় অডিটের জন্য এজি বেঙ্গলে। হিসেব জমা না পড়লে অডিটও থেমে যায়। অর্থ দফতরের পোর্টালেই ধরা পড়েছে এই অনিয়ম। গত জানুয়ারিতে ৮৪টি পুরসভা সময়মতো বার্ষিক হিসেব জমা দেয়নি। তার পর অর্থ দফতরের তৎপরতায় সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ২৩-এ।
তবে এই ২৩ পুরসভার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। সবচেয়ে বড় নজির মিরিক নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি। ২০০৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মোট ১৭ বছরের হিসেব জমা দেওয়া হয়নি। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি— ২০০৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তাতে অসঙ্গতি থাকায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। একইভাবে, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এবং বাদুড়িয়া পুরসভা ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বার্ষিক হিসেব জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এর বাইরে কাঁথি, কাঁচরাপাড়া, মাল, মেখলিগঞ্জ, বনগাঁ, উত্তর দমদম, ধূপগুড়ি, রিষড়া, মুর্শিদাবাদ ও আসানসোল পুরসভাও একাধিক বছরের অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। রাজপুর-সোনারপুর, ফালাকাটা, গয়েশপুর, হলদিয়া, হালিশহর, রানাঘাট, তাম্রলিপ্ত, দাঁইহাট পুরসভা এবং তাহেরপুর নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির বকেয়া তিন থেকে চার বছরের হিসেব এখনও অসম্পূর্ণ। বিশেষ ক্ষেত্রে বালি পুরসভার হিসেব আটকে আছে প্রশাসনিক জটিলতায় হাওড়া পুরসভার সঙ্গে একীভূতকরণ এবং পরে আলাদা হওয়ার কারণে বহু নথি জটিলতায় আটকে যায়।
প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী পুরসভাগুলিকে ইন্টারনাল অডিটের ভিত্তিতে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া হলেও বছর শেষে চূড়ান্ত অ্যানুয়াল অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়াই নিয়ম। নবান্ন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসই শেষ সুযোগ। এর পর সময়সীমা বাড়ানো হবে না। প্রশাসনিক মহলের ধারণা, ভবিষ্যতে এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি আটকাতে রাজ্য প্রতিটি পুরসভায় প্রতিদিনের ক্যাশবুক অনলাইনে আপডেট করার ব্যবস্থা চালু করতে পারে।