জয়েন্ট বিডিওদের বদলির নয়া নীতিতে সিলমোহর দিল পঞ্চায়েত দফতর, বিজ্ঞপ্তি জারি করে কার্যকর নতুন নীতি
আনন্দবাজার | ১৭ আগস্ট ২০২৫
রাজ্যের গ্রামীণ প্রশাসনের অন্যতম স্তম্ভ জয়েন্ট বিডিও পদে বদলি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন নীতি জারি করল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দফতর জানিয়েছে, জয়েন্ট বিডিওদের বদলির ক্ষেত্রে এ বার থেকে স্পষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। এর ফলে প্রশাসনিক কাজে গতি বাড়বে এবং বদলিকে কেন্দ্র করে নানারকম অনৈতিক কার্যকলাপের রাশ টানা সম্ভব হবে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় জয়েন্ট বিডিওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিয়মিত প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি জনস্বার্থে নানা দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে থাকে। এই পদটি পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) গ্রুপ-সি ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরেই এই পদে বদলির কোনও নির্দিষ্ট নীতি না থাকায় নানা অভিযোগ উঠছিল। এ বার নির্দিষ্ট কাঠামোয় বদলি নীতি চালু হওয়ায় কর্মী সংগঠনগুলির একাংশ তা স্বাগত জানিয়েছে। এই নীতি কার্যকর করতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছিলেন তৃণমূল কর্মচারী সংগঠনে নেতা মনোজ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। বদলিকে কেন্দ্র করে এত দিন যে সব অনৈতিক কাজ হত, সেগুলো এখন অনেকটাই বন্ধ হবে। সরকারের উচিত ধাপে ধাপে সব ক্যাডারের ক্ষেত্রেই বদলি নীতি চালু করা।”
এই নতুন নীতির মূল বৈশিষ্ট্যে বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। নতুন বদলি নীতিতে বলা হয়েছে, জয়েন্ট বিডিওরা সাধারণত প্রতি তিন বছর অন্তর বদলি হবেন। সমগ্র রাজ্যকে ছয়টি জোন বা শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে— ‘এ’ থেকে ‘এফ’ পর্যন্ত। এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গকে চারটি শ্রেণিতে এবং উত্তরবঙ্গকে দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। কোনও আধিকারিকের হোম টাউন যে শ্রেণিতে পড়বে, সেখানে অন্তত দুই দফায় কাজ করার সুযোগ পাবেন। তবে নিজ জেলায় কাজের সুযোগ মিলবে কেবলমাত্র রাজ্য পর্যায়ের বিশেষ কমিটির সুপারিশে।
একই জেলা বা একই জোনে টানা দু’বার বদলি করা যাবে না। চাকরি জীবনে একবার বাড়ির কাছাকাছি জোনে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। অবসর গ্রহণের এক বছর আগে কোনও জয়েন্ট বিডিওকে বদলি করা হবে না। বদলি ছাড়াও জয়েন্ট বিডিওরা চাইলে তিন বছরের জন্য অন্য দফতরে ডেপুটেশনে যেতে পারবেন।
এই নতুন নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তত আট বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জয়েন্ট বিডিওদের রাজ্য সদর দফতরে, জেলার সদর দফতরে বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। চাকরিকালীন অন্তত দুই থেকে তিন বছর তাঁরা এ ধরনের জায়গায় কাজ করতে পারবেন। এর ফলে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা আরও বাড়বে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হবে। বদলির ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দেবে রাজ্য পর্যায়ের কমিটি। কোনও আধিকারিকের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন বদলি নীতি কার্যকর হলে প্রশাসনিক কার্যক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি বদলিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের অসন্তোষও কমবে। পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়নের প্রকল্পগুলি আরও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।