• স্বাধীনতা দিবসে ডাক ‘বৈধ’ ভোটাধিকার রক্ষার
    আনন্দবাজার | ১৬ আগস্ট ২০২৫
  • দেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করার ডাক উঠে এল স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেও। অনুপ্রবেশের যুক্তি দেখিয়ে কোনও ভোটারের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না বলে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটাধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় ও জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিল সিপিএম।

    স্বাধীনতা দিবসে শুক্রবার লালকেল্লার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা চলে এসে দেশের জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে। মহিলা এবং জমির দিকে তাদের নজর থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, এমন ঘটনা কখনওই চলতে দেওয়া যায় না। এই সূত্রেই অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছে তৃণমূল এবং অন্যান্য দল। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিতর্ক ইতিমধ্যেই চলছে। তার সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘অনুপ্রবেশ বা অবৈধ ভোটারের কথা বলে এক জন বৈধ ভোটারকেও তার অধিকার নিয়ে হয়রানি করা যাবে না। অনুপ্রবেশ যদি হয়েই থাকে, তার দায়িত্ব পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁর সরকারের। কিন্তু সে কথা বলে আমরা সাধারণ নাগরিকের ন্যায্য ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেব না!’’

    সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার শপথ নিয়েই ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়েছে সিপিএমের তরফে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরের ছাদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। পরে এন্টালি মার্কেটের কাছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের ডাকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সভা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাম নেতারা। বিমানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। দেশ স্বাধীন করার লড়াইয়ে সব ধর্মের মানুষ ছিলেন, সেটাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আরএসএস এত দিন যা বলে এসছে, সেটাকে কার্যকরী করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার এত বছর পরে স্বাধীনতাই চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশের সঙ্কট নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আজ প্রশ্নের মুখে। এই রাজ্যে ভোট লুটের ইতিহাস আমরা দেখেছি। লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা নির্বাচনে ভোট লুট হয়েছে। এই রাজ্যের কমিশনের বিরুদ্ধে আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। ভোট লুট করে গণতন্ত্রকে শেষ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’’

    ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপরে আক্রমণের প্রসঙ্গও এসেছে স্বাধীনতা দিবস পালনে। আরএসএস-বিজেপিকে নিশানা করে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘স্বাধীনতার প্রাক্কালে যে জাতি সব চেয়ে বেশি আত্মবলিদান দিয়েছে, তাদের এখন কোণঠাসা করা হচ্ছে! ভোট চুরি, বর্ণ ও জাতি-বিদ্বেষ, ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে আমাদের শপথ নিতে হবে।’’ দেশে ‘নয়া ফ্যাসিবাদী কায়দা’য় অত্যাচার চলছে বলে অভিযোগ করে তার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্য জুড়েই স্বাধীনতা দিবসে নানা কর্মসূচি চলছে বামেদের।

    প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের দাবি, ‘‘ভোট চুরি, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছি আমরা। তার কোনও জবাব বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেই। মানুষের অধিকার হরণ, কর্মহীনতা-সহ আসল প্রশ্নগুলো আড়াল করতে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে নির্বাচনী জনসভার মতো ভাষণ দিচ্ছেন, আবার ধর্মীয় বিভাজন ডেকে আনছেন।’’

    বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য তোপ ঘুরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের দিকে। ঘাটালে গিয়ে এ দিন তাঁর বক্তব্য, “সংবিধান সবাইকে মানতে হবে। সংবিধানে স্পষ্ট করে কমিশনের কতটা ক্ষমতা, তা উল্লেখ রয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধন হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ! আগে এটা পার করুক তো!”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)