বহরমপুরের কারাগারে প্রথম সরস্বতী পুজো করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সারা দেশ যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উত্তাল, তখন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এখন বহরমপুরে যেটা মানসিক হাসপাতাল, সেটাই তখন ছিল সেন্ট্রাল জেল। এই জেলেই নেতাজী সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছিলেন। দুর্গাপুজোর মতো ধুমধাম করে সরস্বতীপুজোর আয়োজনে হিন্দু-মুসলিম সমস্ত বন্দি হাত মিলিয়েছিলেন। এই সংশোধনাগারে কাজী নজরুল ইসলামও বন্দি ছিলেন। নেতাজী ও বিদ্রোহী কবি যে দু’টি কক্ষে কারাজীবন যাপন করেছিলেন, সেই দু’টি ঘর এখনও অযত্নে পড়ে রয়েছে। ওই দু’টি ঘরের সংস্কার করে সংগ্রহশালা বা নেতাজী-নজরুল চর্চাকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি উঠেছে।
১৯২৪সালের ৩ডিসেম্বর সুভাষচন্দ্র বসুকে বহরমপুর জেলে আনা হয়। ১৯২৫সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। এই সময়ের মধ্যেই ধুমধাম করে বহরমপুর জেলে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেন সুভাষচন্দ্র। সেই পুজো দেখতে সারা জেলা থেকে মানুষ এসেছিলেন। পুজো দেখার অছিলায় বিপ্লবীরাও জেলে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে যেতেন।
ইতিহাসবিদরা জানান, বন্দি সুভাষচন্দ্র বসু ওই সময় পড়ার বই পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে চিঠি লিখেছিলেন। নিজের পাশাপাশি অন্য রাজবন্দিদের জন্য বই কেনা সহ নানা দাবিতে তিনি বন্দিদশায় আন্দোলনও করেছিলেন। জেলে তিনি টেনিস খেলা ও শরীরচর্চা শুরু করেন। সেইসঙ্গে প্রথমবার সংশোধনাগারের মধ্যেই তিনি সরস্বতী পুজো আয়োজন করেন। এখন ওই সংশোধনাগারে মানসিক হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। কিন্তু নেতাজীর স্মৃতিবিজড়িত ওই সেলগুলি এখনও রয়েছে।
শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র’ বই থেকে জানা যায়, জেলের ভিতর সরস্বতী পুজো আয়োজনের জন্য জেদ ধরেন সুভাষচন্দ্র বসু। জেল কর্তৃপক্ষ চাপে পড়ে অবশেষে তাঁর দাবি মেনে নেয় ও পুজোর ব্যবস্থা করে দেয়। জেলের পুজো দেখতে যাওয়ার বাহানায় অনেকেই সেসময় নেতাজির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সরস্বতী পুজো দেখতে দুর্গাপুজোর মতো ভিড় হয়েছিল।
বহরমপুরের ইতিহাসবিদ তথা সংগ্রাহক রমাপ্রসাদ ভাস্কর বলেন, সুভাষচন্দ্র বসু বহরমপুর জেলে যতদিন ছিলেন, এখানে নেতাজির মতোই বিরাজ করতেন। নিজের পাশাপাশি অন্য জেলবন্দিদের জন্য বই পড়া ও শরীরচর্চার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। দেশবিদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি যে সেলে ছিলেন, সেটা সঠিকভাবে সংরক্ষিত হলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।