এপারে এসেও লড়াই থেমে যায়নি স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ করের
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
সুমন রায়, রায়গঞ্জ: দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও লড়াই থেমে যায়নি স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ করের। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা যতীন্দ্রনাথ। ২০০৭ সালে প্রয়াত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে মনে রেখেছেন দিনাজপুরের মানুষ।
জন্মেছিলেন ১৯১৪ সালের ১০ জুলাইয়ে,-বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যতীন্দ্রনাথ ১৯২৯ সালে অনুশীলন সমিতি ছেড়ে যোগ দেন ইয়ং কমরেড লিগে। কৃষকদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়ে যান। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে তাঁকে রাখা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর কিশোরগঞ্জ ছেড়ে চলে আসেন রায়গঞ্জ শহরের কলেজপাড়াতে। শুরু করেন শিক্ষকতা। রায়গঞ্জের কাচিমুহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এপারে এসেও তাঁর লড়াই থেমে থাকেনি। কমিউনিস্ট দলের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৫৬ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের বাংলা-বিহার মার্জার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হন। সামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়েন।
রায়গঞ্জের গয়ালাল রামহরি উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কলেজপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যতীন্দ্রনাথ।
স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানে জন্য ভারত সরকার তাঁকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মানিত করে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রায়গঞ্জের কলেজপাড়ায় একটি সরণীরও নাম রাখা হয়- বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ কর সরণী।
২০০৭ সালে ২৬ জুলাই ৯৩ বছর বয়সে এই স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রয়াত হন। যতীন্দ্রনাথের ছেলে আশিস কর জানান, বাবাকে ছোটবেলা থেকে সেভাবে কাছে পাইনি। বিভিন্ন আন্দোলন, কাজকর্মে বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকত। অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেখতাম, বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসত। বাবার জন্য গর্বিত আমরা।
বয়সের ভারে অনেক স্মৃতি আবছা হয়ে গিয়েছে যতীন্দ্রনাথের স্ত্রী রানী ঘোষের। তিনি বলেন, লোকটা মৃত্যুর আগ-পর্যন্ত লড়াই, আন্দোলন করেছে।
এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন-ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত বলে মনে করেন হিস্টরিক্যাল সোসাইটি অব উত্তর দিনাজপুরের সম্পাদক সোমনাথ সিং। তাঁর কথায়, যতীন্দ্রনাথের ইতিহাস স্কুল, কলেজ পড়ুয়া এবং নতুনদের জানা উচিৎ। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা সবার সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।