অবহেলায় হারিয়ে যাওয়ার পথে মূল্যবান স্মৃতি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করছে টাউন স্টেশন। এখান থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছে শতাব্দী প্রাচীন হেরিটেজ টয় ট্রেন। কিন্তু সেই টাউন স্টেশন আজ ভগ্নপ্রায়। ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থল, দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।
স্বাধীনতার আগে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ দার্জিলিং মেল এই টাউন স্টেশন থেকে চলত। ১৮৮১ থেকে দার্জিলিং মেল চালু হয়। তখন থেকেই দেশ বিদেশের স্বনামধন্য ও বরেণ্য ব্যক্তিরা শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে এসেছেন। ওয়েটিং রুমে কিছু সময় কাটিয়ে টয় ট্রেনে চেপেছেন। এই টাউন স্টেশনে পা রেখেছেন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তি।
কথিত আছে, এই টাউন স্টেশনে এক গোরা সাহেবকে ঘুসি মেরেছিলেন বাঘাযতীন। ১৯০৬ সালে বাঘাযতীন দার্জিলিংয়ে কর্মরত ছিলেন। কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাওয়ার সময় এই স্টেশনে বাঘাযতীন দেখেন এক মহিলার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন জনৈক ইংরেজ। এরই প্রতিবাদে তিনি সেই সাহেবকে ঘুসি মারেন। সেই জায়গাটি বেদি করে রাখা হলেও সেখানে বিশেষ দিনগুলিতে ফুল দেওয়া তো দূরের কথা। কেউ এসে দেখেও না।
এই স্টেশনে পা রেখেছেন, ওয়েটিং রুমে সময় কাটিয়েছেন কোচবিহারের মহারাজা থেকে শুরু করে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই স্টেশনে অনেকবার এসেছেন বিশ্বকবি। আমেরিকার বিশ্ব বরেণ্য সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন, স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও বাঘাযতীন। গান্ধীজিও এসেছেন। এই তালিকা আরও দীর্ঘ। সকলেই এই স্টেশন দিয়ে দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে গিয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এই টাউন স্টেশনকে হেরিটেজ ঘোষণা ও সংগ্রহশালা তৈরি করার দাবিতে নানা সংগঠন সোচ্চার হয়েছে। প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আজকের স্বাধীনতা দিবসের জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাঝে অন্ধকারে ভগ্নস্তূপ হয়ে রয়েছে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন।
বছরের পর বছর উপেক্ষা,অবহেলায় ভূতুড়ে ঘর হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন। অনেকের বরেণ্য ব্যক্তির স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই স্টেশনের সঙ্গে। কিন্তু দীর্ঘ উপেক্ষা ও অবহেলায় সেই কৌলিন্য হারিয়ে টাউন স্টেশন চত্বর দুষ্কৃতী ও নেশাখোরদের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। শহরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভ্রমণ লেখক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সহ যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে তাতে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের এই ভগ্নদশা দুঃখজনক। অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাউন স্টেশনকে হেরিটেজ ও সংরক্ষণ করতে পারেননি। এটা আমাদের সকলেরই লজ্জা। - নিজস্ব চিত্র।