একতাই বল! হাতে হাত ধরে বর্ষায় ফুঁসে ওঠা মালবাজারের নদীতে ঝুঁকির পারাপার পড়ুয়াদের
প্রতিদিন | ১৫ আগস্ট ২০২৫
অরূপ বসাক, মালবাজার: বর্ষা মানেই উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় নদীগুলির সর্বনাশা রূপ। আর সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া। তারই এক রূপ দেখা গেল জলপাইগুড়ির মাল ব্লকের লেইতি নদীতে। বর্ষার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাতে হাত ধরে লেইতি নদী পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে ছাত্রছাত্রীরা। বুধবার তাদের সেই ঝুঁকির পারাপারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার দুপুরেই মাল ব্লকের ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এর তুড়িবাড়ি জুনিয়র হাই স্কুলে পৌঁছান ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও শিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধিরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি অস্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বর্ষার কয়েকদিন নদীর ওপারের বাসিন্দা ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে না এসে অনলাইনে ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হবে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন কালিম্পং জেলার সীমান্তবর্তী ১২ ঘোরিয়া ও ১৬ ঘোরিয়া গ্রামের প্রায় ২৭ জন ছাত্রছাত্রী ও জলপাইগুড়ি জেলার আরও প্রায় ৬ জন ছাত্রছাত্রী লেইতি নদী পার হয়ে তুড়িবাড়ি জুনিয়র হাই স্কুলে আসে। শীতকালে নদীতে জল কম থাকলেও বর্ষাকালে পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হলেই নদীর জল হঠাৎ বেড়ে যায়, তখনই তৈরি হয় বিপজ্জনক পরিস্থিতি। বুধবার বিকেলে স্কুল ছুটির পর যখন ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফিরছিল, সেই সময় আচমকা লেইতি নদীর জল বেড়ে যায়। উপস্থিত স্থানীয় মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যে নদী পার করান। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার স্কুলে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৌমিতা ঘোষ, গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব শান্তনু মজুমদার, তুড়িবাড়ির পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জুলা লামা, ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে অম্লান দাশগুপ্ত, ব্লক শিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধি বনশ্রী দাস এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষিক প্রসান্ত রাই-সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বর্ষাকালে নদীর ওপার থেকে স্কুলে আসা ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ক্লাস করার ব্যবস্থা করা হবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিক প্রশান্ত রাই বলেন, “শিশুদের সুরক্ষাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তাই বর্ষার সময়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়ে চূড়ান্ত বৈঠক হবে।”
ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৌমিতা ঘোষ বলেন, ”তুড়িবাড়ির পাশেই রয়েছে কালিম্পং জেলা। অর্থাৎ লেইতি নদীর পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে কালিম্পং জেলার ১২ ঘোরিয়া, ১৬ ঘোরিয়ার মত গ্রাম। সেখানে প্রাথমিক স্কুল থাকলে হাই স্কুল নেই। তাই সেই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন নদী পেরিয়েই স্কুলে আসে। শীতের সময় নদীতে জল সেভাবে না থাকায়, যাতায়াতের কোন অসুবিধা হয় না কিন্তু বর্ষার সময় নদীর জল যখনতখন বেড়ে যায়। বুধবার সেরকমই একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারণ, এভাবে নদী পেরিয়ে স্কুলে আসলে, যখন তখন বড় বিপদ ঘটে যাবে। তাই বৃহস্পতিবার তুড়িবাড়ি স্কুলে এসে আলোচনা করি। যাতে ছাত্রছাত্রীদের সুক্ষার দিকটা দেখা হয়।”
ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন খুব ভয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে আসে। সুনীতা রাই ও বিজয় বিশ্বকর্মা নামে দুই ছাত্রছাত্রী বলেন, “নদীতে যখন জল বেড়ে যায়, তখন খুব ভয় লাগে। যদি অনলাইনে ক্লাস হয়, তাহলে আমাদেরও ভালো লাগবে।” এদিন আধিকারিকেরা লেইতি নদীও পরিদর্শন করেন। এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এটি কোনও নতুন সমস্যা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তারা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ বা বিকল্প নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে ওই এলাকার মানুষ সহ ছাত্রছাত্রীদের আর জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয়।