একটু একটু করে এই 'রোগ' ধরেছে সকলকেই, আক্রান্ত প্রতিটি বাড়ি, নিস্তার পেতে নেওয়া হল বিশেষ উদ্যোগ ...
আজকাল | ১৪ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনে গত পঞ্চাশ বছর ধরে একটু একটু করে বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। গৃ্হস্থালি থেকে আসবাবপত্র প্লাস্টিকের। বাথরুমের মগ,বালতি জলের বোতল মায় বাজারের সামগ্রী আনতে প্লাস্টিক। সংক্রামক রোগের মতো প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রতিটি বাড়িতেই ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাস্টিক এমন এক যৌগ যা পাঁচশো বছরের বেশি প্রকৃতিতে একই অবস্থায় থেকে যেতে পারে। প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যাবহারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিষ মিশছে জলে। ক্যান্সার-সহ অন্যান্য রোগ ব্যাধি বাড়ছে। অথচ এমন একটি বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়ি 'প্লাস্টিক শূন্য'। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য পরিবেশ দপ্তর থেকে এর থেকে মুক্তি দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ২১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় অংশকে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় জানান, জেলার ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে। একেবারে সুদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে।
তিনি জানান, সকাল থেকে এই প্রকল্পের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। বাড়ির সদস্যদের বলা হচ্ছে, বস্তা,ব্যাগ বা অন্য কিছুতে প্লাস্টিকের বাতিল জিনিস জমা করতে। এরপর প্রকল্পের সাইটে সেগুলি নিয়ে আসা হচ্ছে। বাতিল প্লাস্টিকগুলিকে আলাদা করা হচ্ছে। বোতল,বোতলের ছিপি,প্যাকেট, কার্টুন আলাদা করা হচ্ছে।
কর্মীরা জানান, সকালে বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অত্যন্ত সাবধানে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিক তাঁরাই আলাদা করছেন। তারপর সেগুলি প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। যেগুলি সম্ভব প্রেস করে মন্ড,বা 'সিট'-র আকার দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বনাথ রায় জানান, কিছু জিনিস বিক্রি করা যাচ্ছে। রাস্তা তৈরির কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। কিছু মন্ড, বা প্লাস্টিকের চূর্ণ নানা কাজে লাগে। সেগুলি বিক্রি করা হচ্ছে।
কর্মীরা জানান, বাতিল আবর্জনা গোবর বা অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে সার বানানো হচ্ছে। চাষিদের মধ্যে এর ব্যবহার বাড়ছে।
এই প্রকল্পে সাফল্য পেলে পরিবেশের উন্নতি হবে।বাঁঁচবে মাটি,জলাশয়। এখন কিছু কর্মসংস্থান হয়েছে। আরো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোভিডের সর্বগ্রাসী দু:সময় কাটিয়ে জীবন চলছে ছন্দেই। কিন্তু ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল মাঝে। এর আগে দক্ষিণবঙ্গে থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের নতুন একটি প্রকল্প ঘিরে আগ্রহ দেখা দেয়।
তাদের এই উদ্যোগ চালুর যুক্তি হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, পরিবেশকে নির্মল ও জীবানুমুক্ত রাখার উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি৷ পরিবেশ নোংরা হলে রোগ,জীবানুর প্রকোপ বাড়ে। মহামারীর বাসা হয় এবং বিস্তার ঘটে। এসব গোড়াতেই আটকে দিতে রোজকার ব্যবহার করা জঞ্জাল অপসারণের কাজকেই পাখির চোখ করেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় জানান, এর মধ্য দিয়েই রোগজীবানুকে অনেকখানি আটকে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকা মিলিয়ে একটি পৃথকীকরণ ইউনিট কাজ করবে।
প্লাস্টিক এমন একটি আবর্জনা যা সহজে মাটিতে মেশে না। এর ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। নদী, খাল,বিলের জল দূষিত হয়। এসবের থেকে মুক্তি দিতে এই প্রকল্প একটা 'হুইসল ব্লোয়ার'।