• রেলিংয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ঝলসাচ্ছে ছেলের দেহ, সল্টলেক দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় মূর্ছা গেলেন সৌমেনের মা
    এই সময় | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • ঠায় দুয়ারে বসে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব মহিলা। মাঝে মধ্যেই কেঁদে উঠছেন। খাওয়া-দাওয়া না করার জন্য তাঁর গলা থেকে আওয়াজও বার হচ্ছে না। প্রতিবেশীরা পিঠে বালিশ দিয়ে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মহিলা অস্ফুট গলায় খালি বলছেন, ‘ও যে আমাকে বলে গিয়েছিল…’।

    ছেলে কী বলে গিয়েছিল, তা শোকের মাথায় মনে করতে পারছেন না সল্টলেকের দুর্ঘটনায় মৃত পেশায় ডেলিভারি বয় সৌমেন মণ্ডলের (২২) মা। তবে এই কথাই বার বার বলে চলেছেন। ছেলের ঝলসে যাওয়া দেহটা রেলিংয়ে ঝুলছে, এই দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে দেখেই মূর্ছা গিয়েছিলেন তিনি। সৌমেনের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী ব্লকের নফরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের হিরন্ময়পুর গ্রামে। তরতাজা এই যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া।

    সৌমেনের কাকিমা সুলতা মণ্ডল অবশ্য প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি। ফোন করেন সৌম্যকে (সৌমেন মণ্ডলের ডাকনাম)। কিন্তু ছেলেটার ফোন না লাগায় মন কু ডাকতে শুরু করে। কান্না জড়ানো গলায় সুলতা বলেন, ‘এর পরেই মনে হচ্ছিল, ছেলে আর নেই।’ প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, গত দেড় বছর ধরে কেষ্টপুরে থাকতেন সৌমেন। ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। সংসার চালানোর অধিকাংশ দায়িত্বটাই ছিল তাঁর কাঁধে। তাঁর বাবা তাপস মণ্ডল পরিযায়ী শ্রমিক। ভিন রাজ্যে কাজ করেন।

    এ দিকে দুর্ঘটনার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, সিগন্যালে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সৌমেন মণ্ডল। তাঁর পাশে একটি বাইকও ছিল। বিকেল ৫টার সময়ে একটি গাড়ি সজোরে ধাক্কা দেয় সৌমেনের বাইকে এবং দুর্ঘটনার জেরে তাঁর দেহ রাস্তার পাশের একটি রেলিংয়ে আটকে ঝুলে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে আগুন ধরে যায়। ঝলসে যায় সৌমেনের দেহ। ঘটনার ভয়াবহতায় শিউরে উঠছে নেটপাড়া। এই দুর্ঘটনার পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সল্টলেকের পরিস্থিতি। স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, খবর দেওয়ার পরেও সময়ে দমকল আসেনি।

    যুবককে উদ্ধার করার চেষ্টাও হয়নি বলেও দাবি তাঁদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে নামানো হয় র‌্যাফ।

  • Link to this news (এই সময়)