• পশ্চিমবঙ্গ ‘বাংলা’ হোক চাইছে না কেন্দ্র, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব ৭ বছর ধরে পড়ে দিল্লিতে
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: তিনবার প্রস্তাব পাস হয়েছে বিধানসভায়। অথচ তারপরেও পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হোক, তাতে সায় দিচ্ছে না কেন্দ্র। সাত বছর ধরে দিল্লিতে ‘লাল ফিতের ফাঁসে’ আটকে রয়েছে রাজ্যের নামকরণ প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বাংলার সরকারের প্রস্তাবকে সমর্থন না দেওয়ার পিছনে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছে তৃণমূল।
    গত কয়েকদিন ধরে বাংলার অস্মিতার বিষয়টি প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। বিশেষ করে দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষের উপর আক্রমণ এবং হেনস্থার ঘটনা সামনে আসার পর সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন ভাষা আন্দোলন। আর এই আবহে ফের উঠে এল, রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার প্রসঙ্গটিও। বিধানসভার সচিবালয় থেকে জানা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর লক্ষ্য করেন, কেন্দ্রের বিভিন্ন বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গকে সবার শেষে বলতে দেওয়া হয়। যেহেতু ইংরেজিতে নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল, তাই বর্ণমালা অনুযায়ী ‘ডব্লু’ একদম শেষের দিকে। তাই রাজ্যের প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক বৈঠকে বলবার সুযোগ থাকে একেবারে শেষে। রাজ্যের প্রতিনিধিরা যখন বক্তব্য রাখেন, ততক্ষণে প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকা অর্ধেক মানুষ চলে যান।

    এই অবস্থায় রাজ্যের প্রতিনিধিদের বক্তব্য যাতে প্রথম দিকে থাকে, তারজন্য রাজ্যের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় প্রথম পাশ করানো হয় রাজ্যের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব। সেবার প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, রাজ্যের নাম ইংরেজিতে ওয়েস্ট বেঙ্গলের বদলে করা হোক ‘পশ্চিমবঙ্গ’। তাতে যুক্ত, পি দিয়ে রাজ্যেরনাম শুরু হলে তালিকা অনুযায়ী উপরের দিকে উঠে আসবে রাজ্য। কিন্তু সেই প্রস্তাবে নাকচ করে দেয় কেন্দ্র। তাতে থেমে থাকেনি রাজ্য। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট বিধানসভায় ফের রাজ্যের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাশ করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ওই প্রস্তাব মোতাবেক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, রাজ্যের নাম তিনটি ভাষায় তিনরকম করা হোক। ইংরেজিতে লেখা হবে বেঙ্গল, হিন্দিতে হবে বঙ্গাল, আর বাংলায় লেখা হবে বাংলা। রাজ্যের নাম সব ভাষাতেই করার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাব দিল্লির কাছে পাঠানো হলে, সেটিতেও না করে দেয় কেন্দ্র।

    এরপরেও রাজ্য চুপ করে বসে থাকেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বিধানসভায় প্রস্তাব আনেন রাজ্যের নাম পরিবর্তনের। ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই বিধানসভায় পাস হয় একটি প্রস্তাব। ওই প্রস্তাবে উল্লেখিত হয় বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই রাজ্যের নাম হোক ‘বাংলা’। সেবার বিধানসভায় মমতা বলেছিলেন, রাজ্যের নাম একটাই হোক বাংলা। ২০১৮ সালে বিধানসভা থেকে ওই প্রস্তাব দিল্লিতে যাওয়ার পর, গত সাত বছর ধরে তা হিমঘরেই পরে আছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনও উচ্চবাচ্য নেই বলে অভিযোগ। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলার সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা যেমন চলছে, তেমনই বাংলাভাষীদের হেনস্তাও চলছে। রাজ্যের নাম বাংলা হতে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্র। ওয়েস্ট বেঙ্গল সবার শেষেই থাকুক, সেটাই ওরা চায়।
  • Link to this news (বর্তমান)