মিল্টন সেন, হুগলি: কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। সেটা নিয়ে আন্দোলন করতে এসে আবারও বিতর্ক সৃষ্টি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঞ্চথেকে তাঁর আলু ছড়িয়ে দেওয়ার উস্কানি মূলক বক্তব্যের জেরেই বিভ্রান্তির সঞ্চার। রাস্তায় আলু ছড়িয়ে তার উপর উঠে, পা দিয়ে আলু মাড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে উদ্যত হলেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। যে ফসলের মূল্য নিয়ে আন্দোলন, সেই ফসলকেই রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে চেপে থেতলে দেওয়া হল। বহু কষ্টের ফসলকে পদদলিত হতে দেখে ক্ষুব্ধ সিঙ্গুরের কৃষক মহল। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
বুধবার সিঙ্গুরের রতনপুর মোড়ে আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে সভা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সিঙ্গুরের আলু চাষিদের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে বিজেপির কৃষান মোর্চার ডাকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয় সিঙ্গুরের রতনপুর মোড় এলাকায়। তৈরি হয় অবস্থান মঞ্চ। চারিদিকে লাগানো হয় বিজেপির পতাকা। আর তার আগেই 'অবিলম্বে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে রাসায়নিক সারের দাম কমাতে হবে' এই দাবি তুলে সিঙ্গুরে শুভেন্দু অধিকারির সভাস্থলের আশেপাশে ব্যানার লাগিয়ে রেখেছিল সিঙ্গুর ব্লক কিষান ক্ষেত মজদুর তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি। সেখানে রাসায়নিক সারের দাম কমানোর দাবি জানানোর পাশাপাশি তুলে ধরা হয় ভিন রাজ্যে আলুর দাম। সিঙ্গুর ব্লক ২ নম্বর আঞ্চলিক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি কার্তিক চন্দ্র মাঝি দাবি করেছেন, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সারের দাম কমানো উচিত। পাশাপাশি এরাজ্যের তুলনায় বিজেপি শাসিত রাজ্যে আলুর বাজার দর অনেক বেশি।
এদিকে সিঙ্গুরে রতনপুরে ধর্না মঞ্চে যাওয়ার পথে ডানকুনির টোল প্লাজার কাছে শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে করে কালো পতাকা। লাগাতার স্লোগান উঠতে থাকে জয় বাংলা ও চোর। একদল যুবক টোল প্লাজার কাছে বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় দেখেইকালো পতাকা দেখায়। একটানা স্লোগান দিতে থাকে।
এদিন সিঙ্গুর রতনপুর আলুর মোরে ধর্না অবস্থানে এসে বিরোধী দলনেতা আলু চাষীদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। বলেন, গত ফেব্রুয়ারী মাসে সরকারি দর নির্ধারন করে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, এবছর আলু কেনা হবে।সেই আলু কেনা হয়নি। চাষীরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। তাই সেই বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা আদালতে যান।' তার পরই আলু ছড়িয়ে আন্দোলনের কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই বস্তা খুলে বৈদ্যবাটি তারকেশ্বর রোডের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় আলু। রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া আলুর উপর উঠে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, একইসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগ দাবি করেছেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তিনি বলেছেন, তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জানা উচিত গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই বিপুল পরিমাণ আলুর উৎপাদন হয়েছে। যদি সত্যি তিনি কৃষকদের ভালো চান, তাহলে উদ্বৃত্ত আলু বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। যদি দরদ থাকে তাহলে কেন্দ্র সরকার পেঁয়াজ সহ অন্যান্য ফসলে যেমন ভর্তুকি দেয় আলু চাষেও ভর্তুকি দিক।'
বেচারাম এদিন আরও বলেছেন, 'আমি একজন কৃষক পরিবারের ছেলে হয়ে বলছি আমার খুব খারাপ লেগেছে। যেভাবে কৃষক ঘাম রক্ত ঝরিয়ে আলু উৎপাদন করে। সেই আলুকে শুভেন্দুর সামনে বিজেপির দুষ্কৃতীরা পায়ে করে মাড়িয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক, লজ্জা জনক। শুভেন্দু, কৃষক দরদী সাজতে এসেছিলেন। কিন্তু আলু ফেলে মাড়িয়ে দেওয়ার এই অধিকার রাজ্যের মানুষ শুভেন্দু অধিকারীকে দেয়নি। আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং বিরোধী দলনেতার পদত্যাগ দাবি করছি। আসলে আলুর দাম নিয়ে নয় বিশৃঙ্খলা করতে শুভেন্দু সিঙ্গুরে এসেছিলেন। সিঙ্গুরের মানুষ ওঁদের সঙ্গে নেই।'ছবি পার্থ রাহা।