সাসপেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাত দিন সময় চাইলেন মুখ্যসচিব, ঘণ্টাখানেক বৈঠক হল নির্বাচন কমিশন দফতরে
আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৫
ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড এবং তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার যে নির্দেশ কমিশন দিয়েছিল, সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাত দিন সময় চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বুধবার দিল্লিত কমিশনের সদর দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। ঘণ্টাখানেক সেখানে ছিলেন। কমিশন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব যে সময় চেয়েছেন, তা তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে কমিশনের তরফে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি নবান্নের তরফেও। তবে নবান্নেরও একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যসচিব কমিশনের কাছে ২১ অগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়েছেন এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে বসার কথা। ওই বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হবে, সেইমতোই গোটা প্রক্রিয়া এগোবে। রাজ্য প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিক এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার গোটা দিনটাই কমিশনের নির্দেশ নিয়ে প্রশাসনিক মহলে আলোচনা চলবে। এর পর শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস। ছুটির দিন। শনিবারও বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যা হওয়ার পরের সপ্তাহে হবে বলে জানিয়েছে নবান্নের সূত্র।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অগস্ট কমিশন প্রথম শাস্তি-বার্তা দেওয়ার পরেই একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছিলেন, সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না সরকার। বরং দেওয়া হবে সর্বোচ্চ সুরক্ষা। এর পর ৮ অগস্ট আবার রাজ্যকে চিঠি পাঠায় কমিশন। দ্বিতীয় চিঠিতে রাজ্যকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল কমিশন। সেইমতো সোমবার, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই কমিশনকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। তার পরেই পন্থকে তলব করা হয়েছিল।
বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন সদনে সশরীরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল পন্থকে। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি নির্বাচন সদনে প্রবেশ করেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক ছিলেন মনোজ। বেরোন বিকেল সাড়ে ৫টার পরে। তার পরেই বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাসপেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাত দিন সময় চেয়ে এসেছেন মুখ্যসচিব।
কমিশনের নির্দেশমতো চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করার পরিবর্তে নবান্ন এক জন সহকারী ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং ডেটা-এন্ট্রি-অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। সোমবার কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, আপাতত পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ‘সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (এইআরও) সুদীপ্ত দাস এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ সুরজিৎ হালদারকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেও কমিশনকে জানিয়ে দেয় নবান্ন।
কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছিলেন, সরকারি আধিকারিকদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার উপর নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বও থাকে, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। এ অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই সরল বিশ্বাসে অধস্তনদের উপর কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এমন ক্ষেত্রে বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়াই কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, তা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হয়ে যেতে পারে। এমন সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ওই আধিকারিকদের ক্ষেত্রেই নয়, সার্বিক ভাবে সরকারি আধিকারিকদের হতাশ করতে পারে। তাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে, এক এইআরও এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে রাজ্য।