শ্লীলতাহানি: পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী-ছেলে ধৃত, চাপড়া ব্লকের হৃদয়পুরে শোরগোল
বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তপ্ত চাপড়ার হৃদয়পুর পঞ্চায়েত এলাকা। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে মারপিট হয়। ঘটনাটি ঘটে চাপড়া হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের বেতবেড়িয়ায়। সেই ঘটনায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে চাপড়া থানার পুলিস। ধৃতরা সাইফুদ্দিন বিশ্বাস ও জাহাঙ্গির বিশ্বাস। বুধবার ধৃতদের কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতদের সাতদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। যদিও তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বের তরফ থেকে সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি সাইফুদ্দিনের তরফ থেকেও চাপড়া থানায় মারধরের লিখিত অভিযোগ করা হয়। হৃদয়পুর পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সহ দশজনের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় চাপড়াজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, দুই পক্ষের তরফ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছি।
চাপড়ার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম বলেন, সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। পুরনো গ্রাম্য বিবাদের জেরেই মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি আমার দেখছি। আগামী দিনে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে।
হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিউটি খাতুন বলেন, ওরা অভিযোগ করেছে। সেটা আমাদের কানে এসেছে। কিন্তু কী কারণে এমনটা করল, আমার তা জানা নেই। ওরাই বলতে পারবে।
চাপড়া বিধানসভার বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। একটা মনোমালিন্য থেকে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সবাইকে এক জায়গায় বসিয়ে, সমাধান করব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বেলার দিকে চাপড়া থানার হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের বেতবেরিয়া থেকে একটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়। ২০১৩ সালে ওই এলাকায় তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনায় এক জন খুন হন। কৃষ্ণনগর আদালতে সেই ঘটনার মামলা চলছে।
অভিযোগ ওঠে, ভয় দেখানোর জন্য সাক্ষীদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয়েছে। যদিও সেই বোমাবাজিতে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন পায়নি পুলিস। শাসকদলের একাংশের দাবি, এলাকা দখলের জন্য শাসকদলের অপরপক্ষ এই ঘটনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালের সেই বোমাতঙ্কের জেরেই রাতের দিকে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। অশান্তির আঁচ করে আগে থেকেই সেখানে পুলিস মোতায়েন করা হয়েছিল।
অভিযোগ, সাইফুদ্দিন মঙ্গলবার রাতে বছর একুশের এক তরুণীর ঘরে ঢোকে এবং তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। ওই তরুণী চিৎকার করতে শুরু করে। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকার লোকজন বেরিয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে সাইফুদ্দিনকে ঘিরে ধরেন গ্রামবাসীরা।
পরিস্থিতি বুঝে সাইফুদ্দিন পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকার লোকজন তাকে ধাওয়া করে। তাতে হৃদয়পুর পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আজমির সর্দারও ছিলেন।
সেই সময় দু’পক্ষের মধ্যেই ব্যাপক মারপিট হয়। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে সাইফুদ্দিন ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। সেইসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সহ দশজন মিলে মারধর করেছে, এই অভিযোগ জানায় সাইফুদ্দিন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ শোরগোল পড়েছে। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তিরও দাবি তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।