• চারিদিকে নদ-নদীতে ঘেরা কেতুগ্রামের বিধানপল্লি, টাকা জমিয়ে নৌকা কেনেন গ্রামবাসীরা
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: দু’ দিকে জঙ্গল। তারমধ্যেই বয়ে চলেছে ঈশানি নদী। স্থানীয় বাসিন্দারা যাকে কাঁদর নামে চেনেন। ঠিক যেন বাংলার ‘অ্যামাজন’! যা আদতে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বিধানপল্লি গ্রাম। একেবারে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যোগাযোগের ভরসা শুধু ডিঙি নৌকা। 

    দাঁড় টেনে স্কুলের পড়ুয়ারাই শিক্ষকদের স্কুলে নিয়ে আসে। শ্বাপদসঙ্কুল গ্রামের রাস্তাঘাট। এমন গ্রামে যুবকদের বিয়ে দিতে নাক সিঁটকান মেয়ের বাবারা। কেই বা চান, দুর্গম গ্রামে মেয়েকে ফেলে আসতে। ‘বিয়ে’ না হোক, গ্রামে তো থাকতে হবে! তাই, টাকা জমিয়ে কাঠের ডিঙি নৌকা কেনেন বাসিন্দারা। বহু পরিবারের উঠোনে নৌকা বাঁধাই থাকে। বাজার, স্কুল, হাসপাতাল যেতে গেলে তাঁদের দাঁড় টেনে দেড় কিমি জলপথ পেরিয়ে যেতে হয়। উৎসবের রঙিন আলোয় যখন ঝলমল করে ওঠে নানা শহর, তখন এই গ্রামের মানুষরা আঁধারেই স্বপ্ন বোনেন। দশকের পর দশক ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বিধানপল্লিতে। বাসিন্দারা চাইছেন অন্তত ডুবে যাওয়া কাঠের সেতুটা যদি পাকাপাকি ভাবে করা যেত। মাঠের রাস্তাটা যদি ঢালাই হতো। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ওই গ্রামটা আমাদের নজরে রয়েছে। রাস্তার টাকা খুব শীঘ্রই বরাদ্দ হয়ে যাবে।’ 

    কেতুগ্রাম-২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিধানপল্লি গ্রাম। মাত্র ৩৫টি পরিবারের বাস। সবমিলিয়ে ২৫০ জন বাসিন্দা। ভোটার সংখ্যা ১৫০। সবাই ভোট দিতে যান শাঁখাই এর বেনেপাড়া এলাকায়। গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। চারিদিকে জল আর জল। তারউপর ঈশানী নদীতে কোনও ফেরিসার্ভিস নেই। তাই ভরসা ওই ডিঙি নৌকাই। 

    এখন বর্ষার মরশুম। গ্রামে যাওয়াটা দুঃসাহসিক অভিযান। উদ্ধারণপুর-গঙ্গাটিকুরি যাওয়ার রাস্তায় নৈহাটি থেকে বাঁদিকে মেঠো রাস্তা ধরে গ্রামে যেতে হয়। হাঁটু ভর্তি জল কাদা ভেঙে তবেই নদীর কাছে যাওয়া যায়। গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার সরকার বলেন, কেতুগ্রামের বিধানপল্লি বেশ পুরনো জনপদ।। একসময় পূর্ববঙ্গ থেকে এসে এখানে সবাই বসবাস শুরু করেন। তিনশ পরিবারের বাস ছিল। এখন গ্রাম ছেড়ে সবাই পালাচ্ছেন। মৃত্যুভয় সঙ্গে করেই আমাদের থাকতে হয়। রাজনৈতিক নেতারা ভোটের সময়েই শুধু গ্রামে আসে। কাজের কাজ কিছু হয় না। গ্রামের ছেলে মেয়েরা দাঁড় টেনে স্কুল কলেজে যায়। তবে বর্ষার সময় তারা সবদিন স্কুলে যেতে পারে না।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)