নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: মাথায় হাত রয়েছে মন্ত্রীর। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষেধ সত্ত্বেও ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাব। প্রকাশ্যে, খুল্লামখুল্লা চলছে বেআইনি কাঠের মিল। সেই মিলে চলছে বেআইনিভাবে গাছ চেরাইয়ের কাজ। এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের এক মন্ত্রীর নির্দেশেই সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের সংগঠন তৈরি হয়েছে। সেই সংগঠনকে ঢাল করেই গড়ে উঠেছে টাকা রোজগারের রাস্তা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বছরখানেক আগে বেআইনি কাঠের মিল বন্ধ করার জন্য বনদপ্তর থেকে চিঠি করা হয়। এমনকী বন্ধ করে দেওয়া হয় শ-মিল। কিন্তু, রাজ্যের ওই মন্ত্রী নিজের স্বার্থ কায়েমের জন্য মিল ফের চালুর ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন এলাকার বেআইনিভাবে কাটা গাছ চেরাইয়ের জন্য এই শ-মিল ব্যবহার করা হয়।
এই মিল মালিকরা বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রী যাননি। তবে, এই অনুষ্ঠান থেকে চারা গাছ বিলি করা হয়। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। তাঁরা বলছেন, যারা বেআইনিভাবে গাছ কেটে ফাঁক করে দিচ্ছে তারাই আবার ঘটা করে গাছের চারা বিলি করে সাধু সাজতে চাইছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই মিল মালিকদের মাথার উপর রাজ্যের এক মন্ত্রীর হাত রয়েছে বলেই প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দলের নেতা বা মন্ত্রী যিনিই হোন না কেন, বেআইনি কাজ করলে কেউ ছাড় পাবেন না। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। কেউ বেআইনি কাজ করে থাকলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, বেআইনিভাবে কাঠ মিল চালানো কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চন্দ্রকোণা রোড ব্লকের নবকোলা, রাঙামাটি , গুইয়াদহ এলাকায় প্রচুর কাঠের মিল আছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি বেআইনিভাবে চালানো হচ্ছে। গুইয়াদহ এলাকার একটি মিল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বন দপ্তর। কিছু দিন বন্ধ থাকার পর ওই মন্ত্রীর নির্দেশে ফের চালু হয়। জানা গিয়েছে, গুইয়াদহ এলাকার এক ব্যক্তি বন দপ্তরের ডিভিশনাল ম্যানেজারের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, চন্দ্রকোণা ফরেস্ট রেঞ্জ ও নয়াবসত ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় বহু অবৈধ কাঠের মিল চলছে। প্রায় চার বছর আগে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে এসব মিল বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পুনরায় মিলগুলি চালু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে জঙ্গলমহল সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঢেলে সাজছে। মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করলেও রাজ্যের এক মন্ত্রী তা মানতে না চাওয়ায় হতবাক সাধারণ মানুষ।
এদিন বনমন্ত্রী বলেন, জঙ্গলমহলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। জঙ্গলের উপর বহু মানুষ নির্ভরশীল। তাই জঙ্গল বা গাছের ক্ষতি হতে দেব না। মুখ্যমন্ত্রী গোটা বিষয়ের উপর নজর রাখছেন। গড়বেতা এলাকার বাসিন্দা রাহুল দাস বলেন, জঙ্গলের পরিমাণ দিন দিন কমছে। জনপ্রতিনিধিদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। উল্টে কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বেআইনি কাজে মদত দিচ্ছেন।