• সুইসা হত্যাকাণ্ডে বধূর প্রেমিক সহ গ্রেপ্তার ২, প্রেমের জটিল অঙ্কের সমাধান না পেয়েই খুন
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: বাঘমুণ্ডির সুইসায় মা-মেয়ে ও মাসিকে খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুরুলিয়া জিআরপি থানার পুলিস। ধৃতদের নাম বাবুজান মোমিন ও বিজয় মাছোয়াড়। বুধবার পুরুলিয়া পুলিস লাইনে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান খড়্গপুর এসআরপি দেবশ্রী সান্যাল। পুরুলিয়ার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ জেলা পুলিসের একাধিক আধিকারিক সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই খুন বলে তাঁরা জানান।

    প্রসঙ্গত, সোমবার ভোরে সুইসা স্টেশনের কাছে রেললাইনের উপর কাজল মাছোয়াড়, তাঁর সাত বছরের মেয়ে ও নাবালিকা বোনের দেহ উদ্ধার হয়। ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে চালানোর চেষ্টা হলেও মৃতদের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও গলায় দাগ দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন তাঁদের খুন করা হয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের আভাস প্রথম থেকেই দিচ্ছিলেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে পুরুলিয়া জিআরপি থানার পুলিস ওই দু’জনকে গ্রেপ্তার করতেই তা নিশ্চিত হয়।

    বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে খড়্গপুরের এসআরপি বলেন, ১০ আগস্ট মধ্যরাতে খবর পাওয়া যায়, তিন মহিলার মৃতদেহ রেল লাইনে পড়ে রয়েছে। তারপর পুরুলিয়া জিআরপি থানার পুলিস ও জেলা পুলিস ঘটনাস্থলে যায়। মৃতদেহে রেলে কাটার চিহ্ন ছাড়াও আরও একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারপরই পুরুলিয়া জিআরপি থানার পুলিস একটি সুয়োমোটো খুন ও প্রমাণ লোপাটের মামলা শুরু করে। ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফিও করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার রাতে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের থেকে জানা গিয়েছে, বাবুজান ও কাজলের দীর্ঘদিনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। বিজয়ের সঙ্গে কাজলের বোনেরও সম্পর্ক ছিল। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কজনিত কারণে ঝামেলা হয়। তার জেরেই মা-মেয়ে ও মাসিকে খুন করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।

    পুরুলিয়ার পুলিস সুপার বলেন, জেলা পুলিস ও জিআরপি একই সঙ্গে অভিযান চালিয়ে বাবুজান ও বিজয়কে গ্রেপ্তার করেছে। বাঘমুণ্ডি থানা এলাকা থেকেই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের পুলিস হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাবুজানের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের চড়া গ্রামে হলেও বীরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তার একটা থাকার জায়গা রয়েছে। বাবুজানের বাঘমুণ্ডি থানা এলাকাতেই একটি ইটভাটা রয়েছে। এছাড়াও আরও একাধিক কাজে সে যুক্ত। ওই ইটভাটাতেই কাজল প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করতেন। কাজল ছাড়াও তাঁর পরিবারের অনেকেই ওই ইটভাটাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ধৃত বিজয়ও ওই ইটভাটাতেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। তার সঙ্গে কাজলের বোনের সম্পর্ক ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। 

    পুলিস সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, রেললাইন সংলগ্ন একটি জায়গায় খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্যই তিনজনের দেহ রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যাতে ট্রেনে কাটা পড়ে গিয়েছে বলে দেখানো যায়। জিআরপি থানার পুলিস ও জেলা পুলিসের টিম ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ধৃতরা জেরায় যা জানিয়েছে তার অনেকাংশেই মিল পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকায় বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। পুলিস হেফাজতে ধৃতদের জেরার পর এবিষয়ে আরও জানা যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)