• গান্ধীজি, সুভাষের স্মৃতিধন্য শতায়ূ শিল্পাশ্রম ধুঁকছে, হেরিটেজ ঘোষণার দাবি পুরুলিয়ায়
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: শতবর্ষ পার করেছে পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামেরঅন্যতম পীঠস্থান‘শিল্পাশ্রম’। অথচ সংস্কারের অভাবেতা ধুঁকতে বসেছে। যে জায়গা এক সময় বিপ্লবীদের ‘ডেরা’ ছিল, আজ তা অবহেলায়, অনাদরেশহর পুরুলিয়ারএককোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।‘শিল্পাশ্রম’কে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি তুলতে শুরু করেছে পুরুলিয়া শহরের নাগরিক সমাজ। 

    সালটা ১৯২১। গান্ধীজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে তখন উত্তাল দেশ।এক বছরের মধ্যে ‘স্বরাজ’ আনবেন বলে ঘোষণা করেদেন গান্ধীজি।হাজার হাজার মানুষ স্বতঃষ্ফুর্তভাবে গান্ধীজির ডাকেএই আন্দোলনে যোগ দিতে থাকেন।আন্দোলন কার্যত গণবিস্ফোরণের চেহারা নেয়। শ্রমিক, মজদুর, থেকেশুরু করে দলে দলে সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিতে থাকেন।ওই বছরইগান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরুলিয়া আদালতের ওকালতি ছেড়ে গৃহত্যাগ করেন অতুলচন্দ্র ঘোষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরচাকরি ছেড়ে দেন নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত।দু’জনে মিলে পুরুলিয়া স্টেশনের অদূরে তৈরি করেনএই ‘শিল্পাশ্রম’। এরপর থেকে তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকেই ঘর, সংসার ছেড়ে দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেন।তাঁদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এই ‘শিল্পাশ্রম’।  শোনা যায়, একসময় এখানেই এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এসেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করেদেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাজেন্দ্রপ্রসাদের মতো হেভিওয়েটরা। পরবর্তীকালে জ্যোতি বসু, অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও পা পড়েছিল এই শিল্পাশ্রমে। লবণ সত্যাগ্রহ থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল এই আশ্রম।

    তবে, শুধু স্বাধীনতা আন্দোলনই নয়, ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও মানভূমকে বিহার-ওড়িশা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।মানভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষেরমাতৃভাষার উপর আক্রমণ নেমে আসে।বাংলা ভাষায় কথা বলা যেত না। তখন এই শিল্পাশ্রম থেকেই শুরু হয় ভাষাআন্দোলন। বিহার থেকে বাংলাভাষী মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ওঠে। যদিও এনিয়ে মানভূম কংগ্রেসের নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় ১৯৪৮ সালে লোকসেবক সঙ্ঘের জন্ম হয়। সঙ্ঘের নেতৃত্বেই মানভূমে ভাষা আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিল। বাংলাভাষী মানুষের সেই আন্দোলনেরই ফসল এই পুরুলিয়া।

    বর্তমানে এই শিল্পাশ্রমই লোকসেবক সঙ্ঘের সদর দপ্তর।সঙ্ঘের বর্তমান সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, ২০০৪ সালে ঝড়ে আশ্রমের বেশ কয়েকটি ঘরক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশকিছু মূল্যবান নথিপত্র নষ্ট হয়ে যায়।গান্ধীজি, চিত্তরঞ্জন দাস সহ বহু বিশিষ্টজনের চিঠিপত্র থেকে শুরু করে লোকসেবক সঙ্ঘের নানা বইপত্র, কাজকর্মের দলিল এখনওসুরক্ষিত রয়েছে এখানে।

    সুশীলবাবুর কথায়, চেষ্টা করছি এই অমূল্য সম্পদ রক্ষার।তবে, জেলার সাধারণ মানুষের দাবি, হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক শতবর্ষ প্রাচীন শিল্পাশ্রমকে। সংরক্ষণ করা হোক অমূল্য সব সম্পদ।
  • Link to this news (বর্তমান)