নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্সের ধরণীপুর চা বাগানে ১৮৪ জন শ্রমিককে ‘মৃত’ দেখিয়ে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সরব হয়ে বুধবার জলপাইগুড়িতে আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের দ্বারস্থ হন ওই চা শ্রমিকরা। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন তাঁরা।
অভিযোগ, ধরণীপুর চা বাগানের কয়েকজন শ্রমিক সম্প্রতি পিএফের কেওয়াইসি আপডেট করাতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কে বা কারা তুলে নিয়েছে। এরপর বাকিরাও খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকেও একইভাবে টাকা ‘উধাও’। সবচেয়ে আশ্চর্যের, প্রত্যেককে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের কাছে তার কৈফিয়ৎ চেয়েছেন শ্রমিকরা। দাবি তুলেছেন উচ্চপর্যায়ের তদন্তের।
জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার পবনকুমার বনসাল বলেন, কোনও চা শ্রমিককে মৃত দাবি করে তাঁর পিএফের টাকা তুলতে গেলে সবচেয়ে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট দাখিল করতে হয়। আমরা ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পেলে তা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করে নিই। এরপর মৃতের পরিবারের যে সদস্য দাবিদার থাকেন, তাঁকেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হয়। ফলে এই অভিযোগ আদৌও কতটা সত্যি, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যদি এমনটা হয়েও থাকে, সেক্ষেত্রে যেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, দায় তাদের।
আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের বক্তব্য, যাঁরা দাবি করছেন, তাঁদের ‘মৃত’ দেখিয়ে পিএফের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা যে বাগানের শ্রমিক, সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র পিএফ অফিসে জমা করুন। তাঁদের অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ধরণীপুর চা বাগানের শ্রমিক সুশীলা মুর্মু বলেন, ২০ বছর ধরে বাগানে কাজ করছি। একবারও পিএফের টাকা তুলিনি। কিছুদিন আগে কেওয়াইসি আপডেট করাতে গিয়ে জানতে পারি, আমাকে মৃত দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই বাগানের বাসিন্দা ফুল মুন্ডা, মুন্নি ওরাওঁরাও একই অভিযোগ করেছেন।
অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নাগরাকাটা ব্লক সম্পাদক বিকাশ বারলার দাবি, বাগানের ১৮৪ জন শ্রমিককে মৃত দেখিয়ে তাঁদের পিএফের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এনিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। নাহলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, পিএফ অফিস যে ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে, সেটা আগেই বলেছি। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন পিএফ অফিসে দালালরাজ চলছে। এনিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।