তিস্তায় লাল সতর্কতা, জলঢাকা, মানসাই, কালজানির বহু জায়গায় হলুদ সঙ্কেত জারি
বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ভারী বৃষ্টিতে জেরবার উত্তরবঙ্গ। পাহাড়ের একাধিক জায়গা বিপর্যস্ত ধসে। যার জেরে কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন ১০ নম্বর ও ৭১৭এ জাতীয় সড়ক বন্ধ। এদিকে, সমতলে ফুঁসছে তিস্তা, জলঢাকা, মানসাই, কালজানি সহ একাধিক নদী। ইতিমধ্যে তিস্তা নদীতে জারি হয়েছে লাল সঙ্কেত। কোথাও নদীর স্রোতের তোড়ে ভেঙেছে সেতু, আবার কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত নদীর বাঁধ ও পাড়। সবমিলিয়ে নদী তীরবর্তী ও পাহাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। মঙ্গলবার কোথাও রাতভর বৃষ্টি হয়েছে, অনেক জায়গায় ভোর থেকে বুধবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ার ও কুমারগ্রামে। দুই জায়গায় বৃষ্টির পরিমাণ, যথাক্রমে ২১০.৪০ এবং ২৪০.৪০ মিলিমিটার। এর বাইরে মাথাভাঙা, দিনহাটা, কালচিনি, শালবাড়ি সহ আটটি স্থানে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ মিলিমিটারের উপরে। ১১টি জায়গায় হয়েছে ভারী বৃষ্টি। সেগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ ১৫০ মিলিমিটারের মধ্যে। অন্যান্য এলাকাগুলিতেও বৃষ্টি অব্যাহত।
এর জেরে এদিন কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিন ফের সেভকের শ্বেতীঝোরায় রাস্তার একাংশ ধসে তিস্তার গর্ভে। ২৭ ও ২৯ মাইলের অবস্থাও একই। সংশ্লিষ্ট দু’টি জায়গাতেও রাস্তার অংশ ধসে পড়েছে তিস্তার গর্ভে। দু’দিন ধরে রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে এনএইচআইডিসিএল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছে। কালিম্পংয়ে ৭১৭এ জাতীয় সড়কও ধসে বিধ্বস্ত। এই রাস্তার কাটারিয়ায় এদিন পাহাড়ের উঁচু থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে বোল্ডার। সংশ্লিষ্ট রাস্তাটিও বন্ধ। দার্জিলিং শহরের গিন, লামাহাটা, বৌদ্ধগ্রাম, টুংসুং এবং মিরিকের একটি এলাকা ধসে বিধ্বস্ত।
এদিকে, সমতলে ফুলেফেঁপে উঠেছে তিস্তা, জলঢাকা, মানসাই সহ বিভিন্ন নদী। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত ও সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। এর জেরে ক্রান্তির পাঁচটি, মালবাজারের একটি ও হলদিবাড়ির দু’টি প্লাবিত গ্রামের অবস্থা আরও শোচনীয়। জলপাইগুড়িতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের সাপ্টিবাড়ি থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত জলঢাকা, আলিপুরদুয়ারে কালজানি ও মাথাভাঙায় মানসাই নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি রয়েছে।
শিলিগুড়িতে মহানন্দা, বালাসন, চামটা, পঞ্চনই, রক্তি, কোচবিহারের তোর্সা নদীতেও জলস্তর বেড়েছে। শিলিগুড়ির কাছে সুকনায় পঞ্চনই নদীর স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি সেতু। মাটিগাড়ায় বালাসন নদীতে হড়পা বানে আটকে পড়েন একজন। শীতলকুচির বড়মাসি গ্রামে রত্নাই নদী ও শালবাড়িতে ধরলা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুণ্ডিবাড়ির বাঁশদহ নাটাবাড়িতে থাবা বসিয়েছে তোর্সা নদী। এখানে নদীর পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বৃষ্টির দাপট অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিভিল ডিফেন্সের ওয়াটার উইংস, এসডিআরএফ সতর্ক রয়েছে।