• রোজ ‘প্রাইম টাইম’ শো পাবে বাংলা ছবি, সমস্যা কি মিটবে! কী বলছেন টলিউডের খ্যাতনামীরা?
    আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  • গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজোট হয়ে চিঠি দিয়েছিলেন টলিউডের প্রথম সারির তারকারা। তার পরেই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মুখোমুখি বসেন দেব, শ্রীকান্ত মোহতা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সোনি, পিয়া সেনগুপ্ত, পরিবেশক প্রীতম জালান, হলমালিক নবীন চৌখানি-সহ টলিউডের রথী-মহারথীরা। বক্তব্য ছিল দুটো, বড় বাজেটের হিন্দি ছবি বাংলায় মুক্তি পেলেই বাংলা ছবির ‘আতঙ্ক’। প্রাইম টাইম-সহ সব ক’টি শো বলিউডের দখলে। বাংলা ছবি নিজের রাজ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।

    বৈঠকে সেদিন সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয়, প্রত্যেক দিন একটি করে প্রাইম টাইম শো বাংলা ছবিকে দিতে হবে। বৈঠকের পরে সে কথা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েও দেন মন্ত্রী। বুধবার, ‘ধূমকেতু’ মুক্তির ঠিক আগে নবান্ন থেকে খুশির খবর। মন্ত্রীর বক্তব্য এ দিন বিজ্ঞপ্তি আকারে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত হয়। সেই অনুযায়ী প্রাইম টাইমের সময় নির্ধারিত হয় বিকেল ৩টে থেকে রাত ৯টা। এই সময়ের মধ্যে একটি শো বাংলা ছবিকে দিতে হবে। পাশাপাশি, মাল্টিপ্লেক্সে যতগুলো স্ক্রিন থাকবে তার একটিতে বাংলা ছবি দেখাতেই হবে। দুটো নির্দেশই বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি একটি কমিটিও গড়া দেওয়া হয়েছে। যার শীর্ষে ইমপা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত। বাকি সদস্যদের মধ্যে প্রথম সারির সমস্ত প্রযোজনা সংস্থা, হলমালিক, পরিবেশকেরা রয়েছেন। কোন ছবি কখন মুক্তি পাবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব এই কমিটির কাঁধে।

    এতে কতটা খুশি টলিউড? কী বলছেন পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক এবং হলমালিকেরা?

    বিষয়টি নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম কথা বলেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গত সপ্তাহের বৈঠক তা হলে সফল? প্রশ্ন শুনে খুশির ছোঁয়া তাঁর গলায়। ‘কিলবিল সোসাইটি’র পরিচালক সন্তুষ্ট এই সিদ্ধান্তে। বললেন, “এটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বহু রাজ্যেই আছে। এই রাজ্যেও সেটা হল।” এই সরকারি পদক্ষেপ কি ভাল বাংলা ছবি বানানোর তাগিদ বাড়িয়ে দিল? অস্বীকার করছেন না পরিচালক। তাঁর উপলব্ধি, ভাল ছবি বানানোর তাগিদ অবশ্যই বেড়ে গেল এতে। একই সঙ্গে স্বাধীন পরিচালকদের পক্ষে গেল এই পদক্ষেপ। একই ভাবে উপকৃত হবেন ছোট প্রযোজকেরাও। এর ফলে সারা বছর ধরে তাঁরা তাঁদের ছবি দেখাতে পারবেন। এতে ছবির সংখ্যাও বাড়বে। বড় বাজেটের বাংলা এবং হিন্দি ছবির দাপটে যাঁরা ছবি হলে দেখানোর সুযোগ পান না তাঁরাও এতে উপকৃত হবেন।

    বাণিজ্যেও কি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে? এ বিষয়ে একমত সৃজিত। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক দিক থেকে এ বছর বাংলা ছবি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ‘ধূমকেতু’র আগে পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেছে ইন্ডাস্ট্রি।” দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি সেই পালে হাওয়া দেবে, এটা তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দেন ‘একেন’, ‘আমার বস’, ‘কিলবিল সোসাইটি’র মতো ব্লকবাস্টার ছবির। যা প্রথম ছ’মাসে বাংলা ছবির বাণিজ্যিক মান ঘুরিয়ে দিয়েছে। ‘পুরাতন’, ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’-ও সেই তালিকায় রয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে পুজো এবং বড়দিনের ছবিগুলি। সৃজিতের বিশ্বাস, এ বছর বাংলা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বছর।

    ছবির সংখ্যা বাড়লে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। নইলে ফের শো নিয়ে টানাটানি...

    প্রসঙ্গ তুলতেই সৃজিত জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা স্তরে কথা চলছে। শহর থেকে শহরতলি হয়ে গ্রাম— সর্বত্র প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা আশু বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

    প্রায় একই বক্তব্য পিয়া সেনগুপ্তেরও। তাঁর কথায়,“আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। পাশাপাশি, সুবিধাও হল। এতে ছবিমুক্তি নিয়ে এত দিন ধরে যে অদৃশ্য লড়াই চলত, সেই ল়ড়াই আর থাকবে না।”

    এত দিন হিন্দি ছবি একচেটিয়া প্রাইম টাইম শো পেত। এ বার সেটা ভাগ করে নিতে হবে বাংলা ছবির সঙ্গে। এতে ছবির পরিবেশক এবং হলমালিকদের লক্ষ্মীলাভে কি ভাটা পড়বে?

    “একেবারেই না”, বললেন বিনোদিনী (স্টার) প্রেক্ষাগৃহের মালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি সরকারি নির্দেশিকা পাওয়ার আগেই চারটি শো ‘ধূমকেতু’কে দিয়েছেন। দর্শকদের স্বস্তিতে সিনেমা দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সংখ্যাও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন। তাঁর কথায়, “বাংলা ছবির স্বার্থ সব সময় দেখেছি। আগামী দিনেও দেখব। আমার হলের দর্শকেরা বাংলা ছবি দেখতেই ভালবাসেন।” নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও বাংলা ছবি বাণিজ্যে ব্যর্থ হলেও সেটিকে প্রাইম শো দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে, ‘সইয়ারা’র মতো সফল ছবিও দুটো প্রাইম টাইম শো পাবে না। বাণিজ্যে ব্যর্থ বাংলা ছবির সঙ্গে তাকে শো ভাগ করে নিতে হবে। এতে আখেরে ক্ষতি তো হলমালিকেরই? বিনোদিনী প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার জানিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে আলোচনা করে সেই বাংলা ছবি সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে হলমালিক, পরিবেশকদের।

    একই বক্তব্য পরিবেশক প্রীতম জালানেরও। তিনি সাফ জানিয়েছেন, “যা হয় ভালর জন্যে হয়। এই পরিবর্তনে বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে লাভবান হবে। বাকিদের মতো আমিও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)