পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেবে মমতার সরকার, নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে, এখন চলছে নকশা তৈরির কাজ
আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন্রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ‘অত্যাচার’ নিয়ে যখন রাজনীতি তপ্ত, তখন পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয় নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। এই রাজ্যের সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে সচিত্র পরিচয়পত্র দেবে রাজ্য। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন কার্ডের নকশা তৈরির কাজ চলছে। শীঘ্রই তা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। ছবির পাশাপাশি নাম-ঠিকানার সঙ্গে আর কী কী উল্লেখ থাকবে পরিচয়পত্রে, ইত্যাদি বিষয়ে খুঁটিনাটি কাজ চলছে আপাতত।
রাজ্য সরকারের ‘কর্মসাথী’ নামের একটি পোর্টাল রয়েছে। যা শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যই নির্দিষ্ট। উল্লেখ্য, কোভিডপর্বে যখন লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিককে রাজ্যে ফেরানো হয়েছিল, সেই সময়েই এই পোর্টালটি তৈরি করেছিল নবান্ন। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ‘কর্মসাথী’ পোর্টালেই নাম নথিভুক্ত করে পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাঁদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। রাজ্য সরকারও জানে, শুধু ওয়েবসাইটে পরিচয়পত্র ‘আপলোড’ করলেই হবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের অবহিত করার জন্য প্রচারও জরুরি। তারও পৃথক পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্রের দাবি তুলেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও। বুধবার যুব কংগ্রেসের মধ্য কলকাতা জেলা কমিটি আয়োজিত একটি সভায় অধীর বলেন, ‘‘রাজ্যের কত শ্রমিক অন্য রাজ্যে, অন্য দেশে কাজ করতে যান, তার হিসাব রাজ্য সরকারের কাছে নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্য সরকার পরিচয়পত্র দিক। তাতে যদি লেখা থাকে তাঁরা বাংলার কোন জেলার, কোন ব্লকের, কোন থানা এলাকার বাসিন্দা, তা হলে তাঁদের হেনস্থার মুখে পড়তে হবে না।’’ রাজ্য সরকার যদিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মোট ২২ লক্ষ শ্রমিক রাজ্যের বাইরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতাই একাধিক সভায় বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের ২২ লক্ষ মানুষ বাইরে যেমন কাজ করতে যান, তেমন বাইরের রাজ্যেরও দেড় কোটি মানুষ এই রাজ্যে করেকম্মে খান।’’
রাজ্য সরকার তো বটেই, দলগত ভাবে তৃণমূলও পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে চাইছে। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর)-এর আবহে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে শাসকদল। বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু অংশের। ফলে এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে শাসকদলের জনসমর্থনের ভিত্তির সমীকরণও। তৃণমূলের অভিযোগ, বাংলাভাষী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দিয়ে তাঁদের উপর অত্যাচার নামিয়ে আনা হচ্ছে মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখিয়েও ছাড় মিলছে না। কাউকে কাউকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ও করা হচ্ছে। এই আবহে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ বহু জেলা থেকে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে চাওয়া হচ্ছে পুলিশের শংসাপত্রও। সে সব সামলাতে হচ্ছে স্থানীয় স্তরের জনপ্রতিনিধিদের। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।