• মুঘল-পাঠান ইতিহাসের সাক্ষী ৫০০ বছরের মন্দির, সংস্কারের অভাবে ধুলিসাৎ হবে রায় বাঘিনীর কীর্তি!
    প্রতিদিন | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া:  ভেঙে পড়েছে সম্পূর্ণটাই, নেই পলেস্তারার চিহ্ন মাত্র। বেরিয়ে পড়েছে ইটের গাঁথুনিও। এমনকী কোথাও আবার ভেঙে পড়েছে গাঁথুনিও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা নির্মাণেই সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে গাছের শিকড়। ঝড় বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। হঠাৎ করে দেখলে গা ছমছম করে ওঠে।

    এটি আসলে একটি মন্দির। এর গুরুত্ব কোনও অংশেই কম নয়। ধ্বংসাবশেষটি আসলে প্রাচীন গোপীনাথ জিউ মন্দির। যা উদয়নারায়ণপুরের ঐতিহ্যবাহী রানি রায় বাঘিনী ভবশংকরী সাম্রাজ্যের সময় তৈরি। প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছরের পুরানো এই জিউ মন্দির।

    কিন্তু বছরের পর বছর কারোর হুঁশ না থাকায় এবং যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই প্রাচীন মন্দিরটি। স্থানীয়দের এবং পর্যটকদের অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি একদিন মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।

    জানা গিয়েছে এই মন্দির ৪০০ ? ৫০০ বছরের আগে ভুরিশ্রেষ্ঠ রাজাদের সময় তৈরি। এক সময় ভুরিশ্রেষ্ঠ রাজত্বের রানি ছিলেন ভবশংকরী। ইতিহাস বলছে তিনি পাঠান সেনাপতিকেও পরাস্ত করেছিলেন। কোনও রকমে পালিয়ে গিয়েছিলেন সেনাপতি। রানির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে রায় বাঘিনী উপাধি দিয়েছিলেন স্বয়ং মুঘল রাজ আকবর। কয়েক শতাব্দী পর ইতিহাস নতুন ভাবে আলো পায় তৃণমূল কংগ্রেসের সময়ে। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা ও স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমীদের উদ্যোগে তৈরি হয় রানি রায় বাঘিনি ভবশংকরি স্মৃতি রক্ষা কমিটি। সেটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাধিক উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করা হচ্ছে। কিন্তু দুয়োরানী হয়ে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ জিউ মন্দিরটি।

    উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ তথা রানী রায় বাঘিনী স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুখেন চন্দ্র চন্দ বলেন, ”খুবই প্রাচীন একটি মন্দির। তাই এটা নিয়ে যদি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা হেরিটেজ ডিপার্টমেন্ট নজর দেয় তাহলে খুবই ভালো হয়।” তবে ইতিমধ্যে এই মন্দির সংস্কারের জন্য পর্যটন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রানী রায় বাঘিনী স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক।

    তাঁর কথায়, তহবিল অনুমোদন পেলেই প্রাথমিক কিছু সংস্কারের কাজ করা হবে মন্দিরের উপরে তৈরি করা হবে শেড। এমনকী মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে কিছু সংস্কার করা হবে বলেই জানিয়েছেন সুখেনচন্দ্র চন্দ। কিন্তু কবে এই কাজ শুরু হবে তা নিয়ে সংশয়ে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘কবে এই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হবে সেটাই দেখার’।
  • Link to this news (প্রতিদিন)