এসআইআর নিয়ে সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল রাজ্যের আইনজীবীর
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৪ আগস্ট ২০২৫
এসআইআর নিয়ে সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করলেন রাজ্যের আইনজীবী। ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে, বিহারের পর এবার পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে চলেছে এসআইআর প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের তরফে গত ৮ আগস্ট রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও আইনি লড়াই। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে এক শুনানিতে রাজ্যের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, কোনও প্রকার আলোচনা বা অনুমতি ছাড়াই কীভাবে এসআইআর চালু করা যায়?
রাজ্যের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী গোপাল শংকর নারায়ণ। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।’ তাঁর কথায়, ‘রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কি এই ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়?’ তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ৮ আগস্ট একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনও রকম পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘এই প্রক্রিয়া চালু করার আগে রাজ্যকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় দেওয়া উচিত।’
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে বিহারে চলা এসআইআর সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল। শুনানির শুরুতেই প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই নাম বিহারের এসআইআর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
সিংভির বক্তব্য, কমিশনের দাবি করা নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত নথি অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘কমিশনের তালিকায় উল্লেখিত ১১টি নথির মধ্যে আধার কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না। জল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ আজ প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে। সেগুলিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু দেশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষেরই পাসপোর্ট রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারও নিজের জমি না থাকে, তাহলে কমিশনের নির্ধারিত তালিকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিই তিনি দিতে পারবেন না। তাহলে তাঁরা প্রমাণ করবেন কীভাবে যে তাঁরা এই দেশের নাগরিক?’
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘কমিশন যদি ১১টি নথির সবকটি একসঙ্গে দাবি করত, তাহলে তা নাগরিকদের অধিকারের পরিপন্থী হত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে যে কোনও একটি নথি দিলেই চলবে। সেক্ষেত্রে আপত্তির জায়গা কোথায়?’ সিংভি প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন এই এসআইআর প্রক্রিয়া ভোটের মুখে শুরু করা হচ্ছে? বছরের অন্য সময় এটি করা যেত না?’ তাঁর বক্তব্য, ‘এই সময়টা বেছে নেওয়াটাই যথেষ্ট সন্দেহজনক। এর মাধ্যমে একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা চলছে কিনা, তা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’
পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী গোপাল শংকর নারায়ণ বলেন, ‘বিহারে যেভাবে গণহারে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাতে মানুষের ভোটাধিকার খর্ব হয়েছে। একই ধরনের ঘটনা যদি বাংলাতেও ঘটে, তাহলে তা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল হবে।’ তাই বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার আবেদন জানান তিনি।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, ‘এসআইআর প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে। এমন অবস্থায় কমিশন চাইলে সব ভোটারকেই তালিকা থেকে বাদ দিতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি।’ আদালত এখনও চূড়ান্ত রায় দেয়নি। তবে পরবর্তী শুনানিতে বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে তাকিয়ে দেশজুড়ে উৎসুক রাজনৈতিক মহল। বাংলার মানুষও এই প্রসঙ্গে আরও স্পষ্ট বার্তার অপেক্ষায়।
এই মুহূর্তে স্পষ্ট যে, এসআইআর শুধু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি হয়ে উঠছে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব, পরিচয় এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা – এই চারটি প্রশ্নই উঠে আসছে বারবার। বাংলার ক্ষেত্রে এই বিতর্ক কোন পরিণতির দিকে এগোয়, তার ওপর নির্ভর করবে আগামী কয়েক মাসের রাজনৈতিক চালচিত্র।