• ‘বাংলা হোক বা বাংলাদেশ, সব সমান’, চরম বিদ্বেষে কলকাতার প্রযুক্তিবিদ ও তাঁর ছেলেকে ঠাঁই দিল না নয়ডার হোটেল...
    আজকাল | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে বাঙালি বিদ্বেষ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। সেই বিদ্বেষের সাক্ষী থাকলেন কলকাতারই এক প্রযুক্তিবিদ। বাঙালি হওয়ার ‘অপরাধে’ ওই ব্যক্তি এবং তাঁর ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে ঠাঁই দিল না নয়ডার সেক্টর ৪৪-এর একটি হোটেল। কিশোরটি জাতীয় স্তরের স্কেটার। নয়ডায় একটি প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে এসেছিল।

    কিশোরটির বাবা জানিয়েছেন, হোটেল বুকিং সংস্থা ‘ওয়ো’র মাধ্যমে তাঁরা দু’দিনের জন্য হোটেল বুক করেছিলেন। বুকিং সত্ত্বেও তিনি জানতে পারেন তাঁদের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন হোটেলের রিসেপশনিস্ট। ওই ব্যক্তির দাবি, স্থানীয় পুলিশ স্টেশন হোটেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যে নিরাপত্তার কারণে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাঞ্জাব এবং জম্মু ও কাশ্মীরের কাউকে হোটেলে ঘর না দিতে।

    ব্যক্তিটি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রিসেপশনিস্ট বলেছিলেন যে স্থানীয় পুলিশ তাদের বাংলাদেশ, পাঞ্জাব এবং জম্মু ও কাশ্মীর থেকে কোনও অতিথিকে ঘর না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমি অবাক হয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে আমরা বাংলাদেশি নই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছি। কিন্তু রিসেপশনিস্ট বলেছিলেন যে এটি একই জিনিস এবং তিনি আমাদের ঢুকতে দেবেন না।”

    ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, এর পর তিনি বহুবার ‘ওয়ো’কে ফোন করেন। তিনি বলেন, “কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ অবশেষে ফোন ধরে বললেন যে তারা ৭-১০ দিনের মধ্যে আমার টাকা ফেরত দেবেন। আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না, এরিনা থেকে অনেক দূরে সেক্টর ৪৯-এর অন্য একটি হোটেলে চেক ইন করা ছাড়া।” তিনি জানিয়েছেন, সেক্টর ৪৪-এর হোটেলটি স্কেটিং রিঙ্কের কাছে ছিল। বুধবারই সেখানে রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

    ওয়োর এক আধিকারিক ওই ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে মীরা ইটারনিটি নামক হোটেলটিকে সংস্থার তরফ থেকে মঙ্গলবারই কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। একটি বিবৃতিতে ওয়ো জানিয়েছে, “ওয়ো তাদের প্ল্যাটফর্মে হোটেলগুলিকে এই ধরণের কোনও নির্দেশিকা  দেয়নি। ওয়ো কোনও ধরণের বৈষম্য প্রচার করে না।”

    নয়ডার ডিসিপি যমুনা প্রসাদ জানিয়েছেন, বাংলা বা অন্য কোনও রাজ্যের লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য নয়ডা পুলিশের পক্ষ থেকে হোটেলগুলিকে কোনও আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “হোটেলগুলিকে বাংলাদেশ থেকে আসা লোকদের পরিচয়পত্র এবং ভিসার নথি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।  তবে যথাযথ কাগজপত্র থাকলে এমনকি বাংলাদেশের বাসিন্দাদেরও সেখানে থাকার অনুমতি না দেওয়ার কোনও নির্দেশ নেই।”

    প্রসঙ্গত, বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের উপর ক্রমশ বেড়েই চলেছে। জাতিবিদ্বেষ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। হরিয়ানা থেকে কিছুদিন আগে বাংলার ১০৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণের ভয়ে রাজ্যে ফিরে এসেছেন। রাজ্যের বাইরে বারে বারে চরম হেনস্থার মুখে পড়ছেন বাংলাভাষীরা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাঙালি বিদ্বেষ নিয়ে সরব হয়েছেন বারে বারে। তিনি সাফ জানিয়েছেন, কেবল বাংলা ভাষার নয়, তিনি কোনও ভাষার অপমানই মেনে নেবেন না। ভাষা আন্দোলন শুরুর ডাকা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো।
  • Link to this news (আজকাল)