আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাওনা টাকা চেয়েছিলেন। টাকার বদলে উল্টে কেটে নেওয়া হল তাঁর কান। পেশায় রাজমিস্ত্রি বাংলাভাষী এই পরিযায়ী শ্রমিক রাহুল সিংয়ের বাড়ি বীরভূমের নলহাটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। জীবিকার তাগিদে তিনি মুম্বই গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার আগে তিনি মালিকের কাছে পাওনা টাকা চেয়েছিলেন। অভিযোগ, উল্টে তাঁকে মারধর এবং একটি কান পুরোপুরি এবং অন্যটি প্রায় অর্ধেক কেটে নেওয়া হয়। স্থানীয় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখান থেকে সোমবার নলহাটিতে বাড়ি ফিরেছেন রাহুল।
ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। রাহুলের মা বলেন, 'আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। সেজন্যই ছেলেকে বাইরে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তাঁর উপর এমন নির্যাতন হবে সেটা কল্পনাতেও আনিনি।' ঘটনার পর ক্ষুব্ধ ওই এলাকার মানুষ। পরিবারের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে দ্রুত বিষয়টিতে যেন হস্তক্ষেপ করা হয় এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। রাহুল এবিষয়ে জানান, তিনি মালিকের কাছে টাকা না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। এরপরেই তাঁকে বেধড়ক মারধরের সঙ্গে ব্লেড চালিয়ে তাঁর কান কেটে নেওয়া হয়।
যদিও ভিন রাজ্যে এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বারবার এবং প্রায় প্রতিদিনই এই অভিযোগ উঠছে। কখনও বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের ধরপাকড় করা হচ্ছে আবার কখনও তাঁদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এমনকী নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি দেখালেও সেটা গ্রাহ্য করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি কোচবিহারের বাসিন্দা ১০৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের সর্বস্ব বিক্রি করে হরিয়ানা থেকে এরাজ্যে বাসভাড়া করে ফিরে এসেছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই হরিয়ানার ধানকোটের ১০২ নম্বর সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। কেউ রাজমিস্ত্রি আবার কেউ দিনমজুর, গাড়ি ধোয়ার কাজ বা গৃহসহায়িকা হিসেবে কাজ করতেন। কোনোমতে দিন গুজরান হত তাঁদের। কিন্তু পরিবেশটা আচমকাই পাল্টে যায় যখন তাঁরা হুমকির মুখে পড়েন। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের বলা হয় ৭ আগস্টের পর তাঁরা যেখানে থাকতেন সেখানে কোনও বাঙালি আর থাকতে পারবেন না। যদিও স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ এবিষয়ে কোনো কিছুই ঘোষণা করেনি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় রেখে সকলেই সিদ্ধান্ত নেন ফিরে আসার। সেই হিসেবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে তাঁরা চাঁদা তুলে বাস ভাড়া করেন। এরপর সেই বাসে করেই তাঁরা কোচবিহারের তুফানগঞ্জে তাঁদের এলাকায় ফিরে আসেন।
এর পাশাপাশি রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি জেলায় ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং নিজে ভিন রাজ্যে এরাজ্যের শ্রমিকদের উপর অত্যাচার বন্ধে সরব হয়েছেন। গত ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এবিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান।