বাবুল হক, মালদহ: লাগাতার বৃষ্টিতে বাঁধ ভাঙল মালদহের ভূতনির চরে। আর এরপরেই গঙ্গা এবং ফুলহার নদীর জল হু হু করে ঢুকতে শুরু করেছে লোকালয়ে। যার ফলে ভয়াবহ প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মানিকচক ব্লকের ভূতনির চরের একাধিক গ্রামে। চরম বিপাকে ভূতনির অন্তত দেড় লক্ষ মানুষ। ভূতনিতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পৌঁছতেই এলাকায় ছুটে গিয়েছেন জেলা সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। সরেজমিনে গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে রয়েছেন মানিকচক ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে ভূতনি চরের দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাটাবাঁধ এলাকায় গঙ্গার জলের তোড়ে একটি বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধ কেটে হু হু করে গঙ্গা ও ফুলহার নদীর জল ঢুকতে শুরু করে মালদহের মানিকচক এলাকার ভূতনি চরে। এলাকাটি দুই নদীর সংযোগস্থল। দুই নদীর জল ঢুকে এলাকার খাল, বিল, পুকুর প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। চরম সমস্যার মধ্যে সাধারণ মানুষ। সেচ দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকর শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “প্রবল জলস্রোতের মুখে এই মুহূর্তে কেটে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়।” ফলে কয়েকঘন্টার মধ্যেই ভূতনি চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এদিন সকালে মানিকচকের ভূতনি চরে একটি বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধটি কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বালির বস্তা ফেলে বছর খানেক আগে তৈরি করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির জেরে সেই বাঁধে ফাটল দেখা যায়। ওই গ্রামবাসীর কথায়, বালির বস্তা ফেলে সেই ফাটল সম্প্রতি মেরামত করার কাজ চলছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বালির বস্তা দিয়ে কাজ করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেচ দপ্তরের কর্তারা তাতে কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ গ্রামের মানুষের।
এর মধ্যে লাগাতার বৃষ্টির ফলে দু’দিন ধরে গঙ্গা ও ফুলহার নদীর অস্বাভাবিক জলস্ফীতি ঘটে। দুই নদীর জল চরম বিপদসীমা অতিক্রম করে। গঙ্গা এবং ফুলহারে লাল সতর্কতা সংকেত জারি করে সেচ দপ্তর। কিন্তু বালির বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। প্রবল জলের চাপে সেটি ভেঙে যায়। ফলে ব্যাপক গতিতে দুই নদীর জল ঢুকতে শুরু করে লোকালয়ে। তাতে দক্ষিণ চন্ডীপুর ও হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এমনকী দক্ষিণ চণ্ডীপুর এবং হীরানন্দপুর, এই দুই পঞ্চায়েতের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
ওই বাঁধের উপর দিয়েই দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা যাতায়াত করছিলেন। বাঁধই তাঁদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারনে সেই যোগাযোগের মাধ্যমও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার ফলে বানভাসি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌছুতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। যদিও ওই বাঁধের রাস্তা ব্যবহার করেই প্রশাসনের লোকজনকে দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বানভাসি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিকচকের ভূতনির জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে। শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, পশু খাদ্য, শিশুখাদ্য বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মালদহ সদর থেকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক দল ভূতনিতে পৌঁছে গিয়েছে। এনডিআরএফ টিমকেও কাজে নামানো হতে পারে। সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নদীর জল কমলে ভেঙে যাওয়া বাঁধের পিছনে গার্ডওয়াল তৈরি করা হবে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করা হবে।