দুই প্রেমিক মিলে পুরুলিয়ার মা ও ২ নাবালিকাকে খুন! ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার কিনারা করল পুলিশ
প্রতিদিন | ১৩ আগস্ট ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হাড়হিম তিন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কিনারা করল রাজ্য পুলিশ। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের সহায়তায় বাঘমুণ্ডির সুইসায় মা, মেয়ে, মাসি এই তিন খুনের ঘটনায় দুই আততায়ী গ্রেপ্তার। মঙ্গলবার রাতে বাঘমুণ্ডি থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জিআরপি বা গভর্মেন্ট রেলওয়ে পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় যুক্ত নিহত কাজল ও তার বোন রাধার দুই প্রেমিক। ওই দুই প্রেমিক মিলেই তাদের ভালোবাসার মানুষকে শ্বাসরোধে খুন করে বলে অভিযোগ। চোখের সামনে মা ও মাসিকে খুন হতে দেখে সাত বছরের বালিকারও রেহাই মেলেনি। আততায়ীরা তাকেও তার পরনে থাকা ফ্রকের একাংশ গলায় পেঁচিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ।
মৃতদেহ উদ্ধারস্থল থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে বাঘমুণ্ডি থানার সুইসা এলাকাতেই এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এই ঘটনার প্রমাণ লোপাটের জন্য চান্ডিল-মুরি রেলপথে সুইসা ও তোরাং স্টেশনের মাঝখানে নিহত কাজল মাছুয়ার ও তার বোন রাধা মাছুয়ারের মৃতদেহ উপুড় করে শুইয়ে দেয়। তারপর কাজলের একমাত্র মেয়ে ৭ বছরের রাখিকেও সোজা অবস্থাতেই রেললাইনের উপরে রেখে দেওয়া হয়। খড়গপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার দেবশ্রী সান্যাল জানান, এই ঘটনায় দু’জন অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা তাদের প্রেমিক।
ধৃতরা ঘটনার কথা কবুল করেছে। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খুনের আগে দুই প্রেমিকই তাদের প্রেমিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মৃতদেহ উদ্ধারস্থলের পাশেই একটি জঙ্গল এবং ঝোপঝাড় এলাকায় ধৃত দুই প্রেমিক তার দুই প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করে। আর সেখানেই তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়। সেই সময় কাজলের ৭ বছরের মেয়েকে কিছুটা দূরে কোলড্রিংকস ও চিপস দিয়ে বসিয়ে দেয় ধৃতরা। বালিকা তখন ওই খাবার খেতে ব্যস্ত ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে একজনের নাম বাবুজান মোমিন, বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার তিরুলডি থানার চড়া গ্রামে। অন্যজন বিজয় মাছুয়ার বাড়ি বাঘমুণ্ডির কারু গ্রামে। ধৃত দুজনকেই আজ, বুধবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হচ্ছে। বাবুজানের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে হলেও তার ইটভাটা বাঘমুণ্ডির জিলিং গ্রামে। ওই ইটভাটারই শ্রমিক ছিল নিহত কাজল ও ধৃত বিজয়। ইটভাটার কাজের সূত্র ধরেই মালিক বাবুজানের সঙ্গে কাজলের প্রেম, পরকীয়া। বিজয় তার মালিক বাবুজানের ঘনিষ্ঠ থাকায় কাজলের বোন রাধার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। পাঁচ বছর ধরে কাজলের সঙ্গে বাবুজানের সম্পর্ক ছিল বলে খবর।
এদিকে কাজলের ঘরে অভাব। দারিদ্রে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন কাজলের স্বামী অজয় মাছুয়া। সেই কারণেই প্রায় ২ হাজার কিমি দূরে গত বুধবার তিনি কাজে যান। নিহত কাজলের স্বামীকে গোয়াতে কাজে পাঠানোর পিছনেও বাবুজানের হাত ছিল। এই কথা জানিয়েছেন নিহত কাজলের স্বামী অজয় মাছুয়ারই। তবে তিনি এখনও ট্রেনে গোয়া থেকে ফিরতে পারেননি। সম্ভবত, আগামিকাল, বৃহস্পতিবার সুইসায় পৌঁছবেন।
কিন্তু কাজলকে খুন কেন? অভাবের তাড়নায় বেশ কিছুদিন ধরেই কাজল অত্যধিক টাকা দাবি করছিল বাবুজানের কাছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাবুজানের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। না হলে বাবুজানের ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে সব কথা জানানো হবে বলেও ব্ল্যাকমেল চলতে থাকে। ফলে প্রমাদ গোনে বাবুজান। সামাজিক সম্মান নষ্টের আশঙ্কায় শুরু হয় পরিকল্পনা। স্বামী গোয়ায় কাজে চলে গেলে গত রবিবার বাবুজান ও কাজল সাক্ষাৎ করবে বলে ঠিক হয়। সাক্ষাতের পর বাবুজানের সঙ্গে কাজলের তীব্র বাক-বিতণ্ডা হয়। কাজল বাবুজানকে লাথি মারে। এরপর কাজলকে বুঝিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে পুলিশের দাবি। এরপরই তার গলায় থাকা ওড়না পেঁচিয়ে খুন করে বাবুজান।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, কিছুটা দূরে শ্রমিক বিজয় রাধার সঙ্গে দু’বার মিলিত হয়েছে ওই জঙ্গলেই। তারা কেউ জানে না কাজল খুন হয়ে গিয়েছেন। বিজয়কে ডেকে বাবুজান কাজলকে খুনের কথা জানায়। এরপর পরিকল্পনা করে রাধা ও ওই বালিকাকেও খুন করা হয়।