নকিব উদ্দিন গাজী: বুধবারের শান্ত সকালটা সরাচি গ্রামের জন্য এক নৃশংস অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে রইল। যে উঠোন একসময় হাসি-ঠাট্টায় মুখরিত থাকত, সেখানেই হল এক বিভীষিকা। পারিবারিক কলহের রেশ ধরে বড় ভাইকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা গ্রাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তি থানার অন্তর্গত স্বরাচি গ্রামের এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পারিবারিক অশান্তি কোন ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
নিহত যুবকের নাম সাজিদ সর্দার, বয়স মাত্র ২১। আর অভিযুক্ত তার দুই ছোট ভাই, রাকিব সর্দার ও রশিদ সর্দার। বুধবার সকালে সাজিদ সর্দারের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনও একটি বিষয় নিয়ে তীব্র বচসা শুরু হয়। ঝগড়ার মাত্রা বাড়তেই সাজিদের স্ত্রী তার ছোট দেওর রশিদ সর্দারকে ডাকেন। হয়ত ভেবেছিলেন, দেওর এসে ঝগড়া থামাবে। কিন্তু ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। চোখের সামনে দাদা ও বৌদির ঝগড়া দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে রশিদ। মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
রাগের মাথায় রশিদ সর্দার বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকা একটি বাঁশ তুলে নেয়। উত্তেজনার পারদ তখন তুঙ্গে। এর পরের মুহূর্তেই ঘটে যায় সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই রশিদ সর্দার ওই বাঁশ দিয়ে সজোরে আঘাত করে সাজিদ সর্দারের মাথায়। আকস্মিক এই আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাজিদ। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। মুহূর্তে সেই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশীদের কানেও। আশেপাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন মানুষজন।
স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর জখম সাজিদকে দ্রুত ডায়মন্ড হারবার গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই খবর গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। হতভম্ব গ্রামবাসী বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে সামান্য পারিবারিক বিবাদের জেরে এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি উস্তি থানার পুলিস গ্রামে পৌঁছায়। পুলিস দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার পুলিস মর্গে পাঠায়। এরপরই শুরু হয় তদন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাজিদের দুই ভাই রাকিব সর্দার এবং রশিদ সর্দারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিস। তাদের বয়ান এবং প্রতিবেশীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল, মুহূর্তের রাগ কী ভাবে একটি সাজানো সংসারকে তছনছ করে দিতে পারে। যে হাত ভাইকে আগলে রাখার কথা, সেই হাতই কেড়ে নিল প্রাণ। স্বরাচি গ্রামের বাতাস এখন শুধুই চাপা শোক আর বিস্ময়ের ভারে ভারাক্রান্ত।