হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের ভিড়, উত্তরবঙ্গের গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক, লেপ্টোস্পাইরা কী রোগ জানেন? ...
আজকাল | ১৩ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: হেপাটাইটিস ও লেপ্টোস্পাইরা, এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ রাজগঞ্জের সন্ন্যাসী কাটা গ্রামপঞ্চায়েতের চেকরমারি গ্রাম সহ আরও আটটি গ্রাম। স্থানীয়দের দাবি, ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে। অভিযোগ সন্যাসী কাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের চেরক মারি গ্রামে রয়েছে একটি মুরগির হ্যাচারি। সেখান থেকে সম্প্রতি মাছির উপদ্রব ছড়ায় গ্রামে। এবং সেখান থেকেই এই রোগ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে জন্ডিসের উপসর্গ নিয়ে রোগীদের লম্বা লাইন বাড়ছে। রাজগঞ্জের সন্ন্যাসী কাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকরমারি গ্রাম-সহ মোট ৮ টি গ্রামে লাফিয়ে বাড়ছে জন্ডিস ও লেপ্টোস্পাইরা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। কিছু মানুষ আবার স্ক্র্যাব টাইফাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এবার লেপ্টোস্পাইরা।
কী এই লেপ্টোস্পাইরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মূলত ইঁদুরবাহিত রোগ। সাধারণ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর খুব একটা মেলে না। সম্প্রতি রাজগঞ্জের চেকরমারি গ্রামে একসঙ্গে প্রায় ১৫ জন লেপ্টোস্পাইরা রোগীর খোঁজ মেলাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকেই জন্ডিসের উপসর্গ নিয়ে রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে আউটডোরে এসেছেন। পাশাপাশি যাঁদের রক্তের স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে নতুন করে আরও আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাজগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ রাহুল রায় জানান, গ্রামগুলিতে চলছে স্ক্রিনিং ক্যাম্প।
রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে জন্ডিস আক্রান্ত পুরনো রোগীদের পাশাপাশি মঙ্গলবার আরও নতুন করে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশ উঠতি বয়সী।গর্ভবতী মহিলারাও একই উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এই মুহূর্তে ওই হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ১০টি বেড বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইতিমধ্যে ১৪৮ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে অজানা জ্বরের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল উত্তরবঙ্গে। দিনহাটায় সিতাই ব্লকে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজে খোলা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড৷ বৃহস্পতিবার আইসোলেশন ওয়ার্ডের পরিকাঠামো দেখতে যান রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তিন সদস্য৷
এবিষয়ে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নির্মল কুমার মন্ডল জানান, 'সিতাই-এর মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদের বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ মেডিক্যাল কলেজে খোলা হয়েছে বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ড৷'
জানা গিয়েছে, সিতাই ব্রহ্মত্তর চাত্রায় এক বাড়িতেই পরপর তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যেকেরই মৃত্যুর আগে দেখা গিয়েছিল জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ। গত ২২ এপ্রিল থেকে ১৪মে'র মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়। মাত্র ২২দিনের ব্যবধানে একজন পুরুষ ও দুই মহিলার এই মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। আক্রান্তদের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। কোনও সংক্রমণের জন্য এই মৃত্যু কিনা তা জানতে স্বাস্থ্য দপ্তরের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল মৃতদের বাড়ি লাগোয়া এলাকায় পরিদর্শন করেছেন। এই মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যেই চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল এলাকায়।