• 'বাঁধ কেটে বন্যা করিয়েছে সিপিএম বিজেপি!' মালদহের বন্যা নিয়ে অভিযোগ তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের...
    আজকাল | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি মালদহের মানিকচকে ভুতনির বাঁধ ভেঙে দূর্বিষহ কাণ্ড। এ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের। তিনি অভিযোগ করেছেন ষড়যন্ত্র করে এই বাঁধ কাটা হয়েছে। এই অভিযোগ তিনি সরাসরি সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে করেছেন। অন্যদিকে এই পরিস্থিতির জন্য পাল্টা সাবিত্রী মিত্র কে দায়ী করেছেন এলাকার সিপিএম নেতা দেবজ্যোতি সিনহা। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌড় চন্দ্র মন্ডল। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফুলহার নদীর জলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

    খবর অনুযায়ী মাত্র মাস দুয়েক আগেই ১ কোটি ৩৫লক্ষ টাকা বরাদ্দে তৈরি হয়েছিল এই বাঁধ। সেই বাঁধ ভেঙে গেল ফুলহারের প্রবল জলের তোড়ে। বুধবার সাত সকালে এমনই বাঁধ ভেঙে হু হু করে সংরক্ষিত এলাকায় জল ঢোকার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়াল মালদার মানিকচক ব্লকের ভুতনির দক্ষিণ চন্ডীপুর এলাকায়। গত বছরের মতো এবারও তৈরি হল বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা। যা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। উল্লেখ্য, গত বছর ভুতনির দক্ষিণ চন্ডীপুরে বাঁধ কেটে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। 

    দু'দফার এহেন বন্যায় প্রায় মাস দুয়েক গোটা ভুতনি এলাকা প্লাবিত হয়ে থাকে। এরপর শুখা মরশুমে মালদা জেলা সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে ভুতনির দক্ষিণ চন্ডীপুরের কাঁটাবাঁধের জায়গায় ১কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দিন কয়েক আগেই সেই বাঁধ চুঁইয়ে বাঁধের নিচ দিয়ে একটু একটু করে ভুতনির সংরক্ষিত এলাকার দিকে ফুলহারের জল ঢোকার দৃশ্য নজরে আসে। যদিও সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে বালির বস্তা ফেলে সেই জল আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা শেষমেশ কাজে আসে না। বুধবার ভোরের দিকে হঠাৎ করেই ফুলহারের প্রবল জলের তোড়ে ভুতনির দক্ষিণ চন্ডীপুরের নব নির্মিত বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে ফুলহারের জল প্রবল গতিতে হু হু করে ভুতনির সংরক্ষিত এলাকার দিকে ঢুকতে শুরু করে। এই জল দক্ষিণ চন্ডীপুরের বিভিন্ন নিচু এলাকা হয়ে আগামীতে ভুতনির উত্তর চন্ডীপুর এবং হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ভাসিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বভাবতই এ'বছর ফের নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হল ভুতনিতে। যা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দক্ষিণ চন্ডীপুরের বাসিন্দাদের একাংশ।

    সূত্রে জানা গিয়েছে, চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা নদী। ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৮ টি গেট খোলা এই পরিস্থিতির মধ্যে মালদার মানিকচকের ভুতনিতে ফুলহার নদীর তরে ভাঙলো রিং বাঁধ। ঘটনার জেরে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জলবন্দী হওয়ার সম্ভাবনা। গঙ্গার জল স্ফীতির ফলে কালিয়াচক তিন নাম্বার ব্লকের বীরনগর, দেওনাপুর, পারলারপুর সহ বেশ কিছু এলাকায়, জলমগ্ন পরিস্থিতি। 

    পাশাপাশি মহানন্দা নদীর জল স্তর বৃদ্ধি হওয়ায় ইংরেজবাজার পৌরসভার, পাঁচটি ওয়ার্ডের নদীর সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন। কার্যত ভারী বর্ষণে জেলার ৩ মূল নদীর জল বৃদ্ধির হলে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে মালদা জেলা । রিপোর্ট তলব নবান্নের মালদার মানিকচকের ভুতনি এলাকায় বুধবার ভোরবেলা বাঁধ ভেঙে যায়। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা ভুতনি দ্বীপের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনার জেরে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জলবন্দী হবার আশঙ্কা। এরই মধ্যে এলাকা তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র অভিযোগ করেছেন ষড়যন্ত্র করে সিপিএম ও বিজেপিরা এই বাঁধ কেটেছে। উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। পাল্টা বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌড়চন্দ্র মন্ডল বলেন এই পরিস্থিতির জন্য এই এলাকার বিধায়ক ও রাজ্য সরকার দায়ি।

    অন্যদিকে মহানন্দার জল বাড়ায়, ইংরেজবাজার কারও বাড়ির ছাদ বরাবর, তো আবার কারও বাড়ি সম্পূর্ণ জলমগ্ন। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে একেবারে ফুলে ফেঁপে উঠেছে মালদার  মহানন্দা। প্রায় বিপদ সীমা দিয়ে বইছে মহানন্দা। এই অবস্থায় ইংরেজ বাজার পৌরসভার ৮,৯,১২,১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই শতাধিক বাড়ি এই মুহূর্তে জলমগ্ন সেই সঙ্গে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    ইংরেজ বাজার এবং পুরাতন মালদা পৌরসভার মাঝ বরাবর বয়ে গেছে মহানন্দা। আর এই মহানন্দার দুই পাড়ে বসবাস প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবারের। তার মধ্যে ইতিমধ্যে  ইংরেজ  বাজার পৌরসভার এই পাঁচটি ওয়ার্ডের দুই শতাধিক বাড়ি জলমগ্ন। প্রতিবছর তাদের মহানন্দার জলে প্লাবিত হতে হয়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই সমস্ত বন্যা দুর্গতদের জন্য ফ্ল্যাড সেন্টারের ব্যবস্থা করা হলেও এটা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠছে। 

    এহেন পরিস্থিতিতে জলমগ্ন এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উড়তে শুরু করেছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার বিরোধী দলনেতা অম্লান ভাদুড়ি। দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। পুরো চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ন চৌধুরী জানিয়েছেন ফ্লাড সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

    ঘটনার জেরে মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন সমস্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই নবান্নে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকারীর টিম রেডি রয়েছে। প্রশাসন সবকিছু থেকে নজর রেখেছে। মালদা উত্তরের বিজেপি সংসদ খগেন মুর্মু বলেন গঙ্গা ভাঙ্গন মোকাবিলা থেকে শুরু করে বন্যা প্রতিরোধ করা নিয়ে এই সরকার  কেন্দ্র সরকারের সাহায্য চায় না। নিজেরাও কিছু করে না, যার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী বলেন কেন্দ্র সরকার সাহায্য করে না। আর এখানকার বিজেপির লোকেরা রাজনীতি করে। ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়ে আছে জেলার দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে থাকা দরকার এখন রাজনীতি করা উচিৎ নয়।
  • Link to this news (আজকাল)