• ‘উত্তম জেঠু ঝুঁকি নিতে শিখিয়েছেন’, ‘দেবী চৌধুরাণী’র টিজ়ার-মুক্তির আগে কেন বললেন প্রসেনজিৎ?
    আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  • ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বাংলা তথা দেশের প্রথম সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, যার নেতৃত্বে ভবানী পাঠকের মন্ত্রে দীক্ষিত দেবী চৌধুরাণী। এ বছর ভারতের স্বাধীনতার উদ্‌যাপনে শামিল পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র এবং তাঁর আগামী ছবি ‘দেবী চৌধুরাণী: দ্য ব্যান্ডিট কুইন অব বেঙ্গল’। বুধবার প্রকাশ্যে আসছে প্রথম ঝলক। তার আগেই মঙ্গলবার সেই টিজ়ার দেখেছে আনন্দবাজার ডট কম।

    ছবিতে নামভূমিকায় শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘ভবানী পাঠক’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও আছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, দর্শনা বণিক, কিঞ্জল নন্দ এবং এক ঝাঁক বিদেশি অভিনেতা। খবর, ছবির টুকরো দৃশ্য ইতিমধ্যেই পছন্দ দর্শকমহলে। ছবিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি কিংবা শ্রাবন্তীর অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয়— প্রশংসা কুড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। এবং অবশ্যই প্রসেনজিতের উপস্থিতি। তাঁর অ্যাকশন, টিজ়ারে ধারাভাষ্য অথবা কেন্দ্রীয় চরিত্রকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মুহূর্তগুলো নিয়ে চর্চা চলছে।

    যিনি অভিনয়ের কারণে বার বার চর্চার শিরোনামে আসেন, টলিউডের সেই ‘ইন্ডাস্ট্রি’ কী বলছেন? ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয়ের ঝুঁকি খুব। সমালোচিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। অনায়াসে সেই ঝুঁকি তিনি নেন কী করে? প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর।

    প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতার মতে, এই ধরনের ছবিতে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি খুশি। “বহু দিন পরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বহুপঠিত উপন্যাস নিয়ে ছবি হচ্ছে। আমার সৌভাগ্য এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। এর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবিতেও কাজ করেছি। যেগুলো প্রায় বাংলা ছবি থেকে চলে গিয়েছে।” কারণ, আগে উপন্যাস থেকে ছবি বানানোর চল ছিল। এখন যেটা কম হয়। উদাহরণ হিসাবে তিনি বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ বা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে তৈরি ছবির কথা বলেছেন। এও জানিয়েছেন, বলিউডে এই প্রবণতা থাকলেও বাংলা ছবিতে সেই প্রবণতা ‘ফেলুদা’ বা ‘ব্যোমকেশ’ বা ‘কাকাবাবু’তেই সীমাবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে প্রসেনজিতের আরও উপলব্ধি, ভারতীয় ছবিতে আবারও ‘পিরিয়ড’ ছবির ধারা সম্ভবত ফিরতে চলেছে। যেমন, এ বছরের পুজোয় দুটো ঐতিহাসিক ছবি একসঙ্গে মুক্তি পেতে চলেছে। দেবের ‘রঘু ডাকাত’, শুভ্রজিতের ‘দেবী চৌধুরাণী’।

    ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় সহজ কথা নয়। বিশেষ করে তথাকথিত বাণিজ্যিক ঘরানার রোমান্টিক ইমেজের নায়কের ক্ষেত্রে। প্রসেনজিৎ ঘুরেফিরে ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কখনও তিনি ‘জাতিস্মর’-এর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। কখনও তিনি ‘গুমনামী’ ছবিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই ধরনের ছবি বা চরিত্রে অভিনয় কি বাণিজ্যিক ঘরানার অভিনেতার জীবনীপঞ্জি সমৃদ্ধ করে? প্রসেনজিতের কথায়, “আমি মনে করি, এই যাত্রা অনেক আগে শুরু করেছি। যখন আমি কমার্শিয়াল ছবি করতাম তখনই ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ ছবিতে ‘মহেন্দ্র’ হয়েছি। তার পর ‘লালন’।” বলিউডেও এই ধারা অক্ষুণ্ণ। তিনি ‘বম্বে টকিজ়’-এর প্রতিষ্ঠাতা ‘হিমাংশু রাই’ হয়েছেন বিক্রম মোতওয়ানের সিরিজ় ‘জুবিলি’তে। সেই ধারা মেনে তিনি ‘দেবী চৌধুরাণী’তে ‘ভবানী পাঠক’। চিত্রনাট্য পড়তে পড়তে বুঝেছেন, সাধনা এবং বিপ্লব এই ব্যক্তিত্বের মধ্যে সহাবস্থান করত, যা তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এও জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আদতে যে কোনও অভিনেতার কাছে বড় প্রাপ্তি।

    কিন্তু সমালোচনার ভয়! যে কারণে হয়তো হাতেগোনা অভিনেতা এই ঝুঁকি নেন। টলিউড বলছে, প্রসেনজিতের পরে কয়েক বছর ধরে যে ঝুঁকি দেবকে নিতে দেখা যাচ্ছে। বাংলা ছবির উন্নতি চাইলে ঝুঁকি নেওয়া কত জরুরি?

    বড়পর্দার ‘ভবানী পাঠক’ ফিরে গিয়েছেন অতীতে। সেটা ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়দের যুগ। ওঁরাও বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির পাশাপাশি উপন্যাসধর্মী ছবিতে অভিনয় করেছেন। যেমন, ছবিবাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ হয়েছেন। শুভ্রজিতের ছবিতে অভিনয় করতে করতে মনে হয়েছে, আগামী প্রজন্ম বড় উপন্যাস, বহুল জনপ্রিয় চরিত্র নিয়ে কাজ করতে আবার আগ্রহী হচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তার পরেই মৃদু হেসে তাঁর দাবি, “সমালোচনা, ঝুঁকি তো নিতেই হয়। আমরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকি এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। আমি যখন ‘২২শে শ্রাবণ’ ছবিতে ‘প্রবীর’ চরিত্রটি করেছিলাম, তখন ভীষণ ঝুঁকি নিয়েছিলাম। কারণ, সেই সময় এই ধরনের ‘অ্যান্টি হিরো’ চরিত্র দর্শক দেখে অভ্যস্ত নন।” এই সাহস, ঝুঁকি বা সমালোচনা সহ্য করে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস তাঁকে জুগিয়েছেন উত্তমকুমার। কথা প্রসঙ্গে অকপটে সে কথাও জানাতে ভোলেননি তিনি। প্রসেনজিতের ঋণস্বীকার, “রোমান্টিসিজ়মের শেষ কথা ছিলেন উত্তম জেঠু। ওই সময় তিনি ‘বাঘবন্দি খেলা’তে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যা দেখলে দর্শক রেগে যাবে।” সাহস বা ঝুঁকি নেওয়া আমি এঁদের থেকেই শিখেছি।’’

    প্রতি বছরের মতো এ বছরেও একাধিক বাংলা ছবি মুক্তি পাবে। তার মধ্যে অন্যতম প্রসেনজিৎ অভিনীত ছবিটি। প্রায় প্রতি বছর পুজোয় তাঁর অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। অভিনেতা এখনও সেই প্রথম দিনের মতোই পুজোয় ছবিমুক্তির প্রতীক্ষায় থাকেন। পাশাপাশি, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাকি ছবির প্রযোজক-পরিচালকদেরও। অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁর ছবি দর্শক যেমন দেখবেন তেমনি তাঁরা যেন বাকি ছবিও দেখতে প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছে যান।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)