নির্যাতিতার মা-কে পুলিশি মারের প্রমাণ এখনও নেই, বলল পুলিশ! সঙ্গে জানাল, বাবার অভিযোগ নিয়েছে থানা
আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
আরজি কর-কাণ্ডের নির্যাতিতার মাকে গত ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানের সময় রাস্তায় ফেলে পুলিশি মারধরের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন কলকাতার জয়েন্ট সিপি (সদর) মীরাজ খালিদ। তিনি জানান, কলকাতা পুলিশের কাছে সেই দিনের ঘটনার অনেক ভিডিয়ো রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ভিডিয়োয় নির্যাতিতার মাকে পুলিশি মারধরের কোনও প্রমাণ মেলেনি। অন্য দিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগ তুলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে ইমেল করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা। সেই ইমেলের জবাব দিয়েছিলেন সিপি। মনোজ জানান, অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে! নির্যাতিতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ‘জেনারেল ডায়েরি’ (জিডি) করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ ছিল, গত ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানের দিন দুপুর ২টো নাগাদ কিড স্ট্রিট এবং জওহরলাল নেহরু রোড ক্রসিংয়ের কাছে কয়েক জন পুলিশকর্মী তাঁর স্ত্রীর ডান হাত টেনে ধরেন। এর ফলে তাঁর স্ত্রী হাতে থাকা শাঁখা ভেঙে যায় বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। তার পরেই পুলিশ লাঠি দিয়ে নির্যাতিতার মায়ের মাথায় এবং পিঠে আঘাত করে বলে অভিযোগে লেখা হয়েছে। নির্যাতিতার বাবার দাবি, এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত। এই হামলার কারণে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত বলেও দাবি করেছেন নির্যাতিতার বাবা। পুলিশকে বিষয়টি জানাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলেও তিনি জানান। তাঁর কথায়, “আমরা প্রথমে শেক্সপিয়র সরণি থানায় মেল করেছিলাম। সেখান থেকে বলা হল পার্ক স্ট্রিট থানায় করতে। সেখান থেকে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলা হল।’’ এর পর নির্যাতিতার বাবা কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিককে ইমেল করেন। মঙ্গলবার বিকেলে সেই ইমেলের জবাব দিয়ে লালবাজার আরজি করের নির্যাতিতার বাবাকে জানান, নিউ মার্কেট থানায় তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। আইন মেনে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে!
নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ নিয়ে মীরাজও একই কথা জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে সেই দিনের ঘটনার (নবান্ন অভিযানের সময়) বেশ কিছু ভিডিয়ো রয়েছে। সব ভিডিয়ো খতিয়ে দেখা হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত নির্যাতিতার মাকে রাস্তায় ফেলে পুলিশি মারধরের কোনও ঘটনা ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়নি।’’ নির্যাতিতার মায়ের আহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মীরাজের আবেদন, ‘‘যদি কারও কাছে ওই ঘটনা সম্পর্কিত কোনও ভিডিয়ো বা ছবি থাকে, তা হলে তা পুলিশকে দিন।’’
একই সঙ্গে মীরাজ মঙ্গলবার দাবি করেছেন, পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ৯ অগস্ট ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি করা হয়। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে নবান্ন অভিযান নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘‘৪০০-৫০০ জন লোক ডোরিনা ক্রসিংয়ের সামনে জড়ো হয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। জমায়েত থেকে পুলিশকে খারাপ কথা বলা হয়। এমনকি পুলিশকে মারধর করেন অনেকে।’’ পুলিশকে মারধর করার ছবি মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে দেখানো হয়।
নবান্ন অভিযানের দিন অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছ’টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে সেই বিষয় উল্লেখ করে মীরাজ জানান, ভিডিয়ো দেখে এখনও পর্যন্ত কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নোটিস পাঠানো হয়েছে ছ’জনকে। লালবাজার সূত্রে খবর, ছ’টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় ছ’জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। নিউ মার্কেট থানার অভিযোগের ভিত্তিতে সজল ঘোষ, তমোঘ্ন ঘোষ, অশোক দিন্দা এবং হেয়ার স্ট্রিট থানার অভিযোগের ভিত্তিতে ভোলা সরকার, কুশল পান্ডে, কমলজিৎ সিংহকে নোটিস পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। লালবাজার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন কী ঘটেছিল, কী ভাবে তাঁর মাথায় লাগল— তা জানতে প্রয়োজনে নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে পুলিশ।