নানা রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘হেনস্থা’র অভিযোগে বাংলার রাজনীতির সুর চড়া। এই আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য-ভান্ডার নিয়ে বিভ্রান্তির অভিযোগ তুললেন গবেষকদের একাংশ। যদিও রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ জানিয়েছে, প্রায় ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। সম্প্রতি এই ২২ লক্ষ শ্রমিককে রাজ্যে ফেরানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
‘বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের হেনস্থা’ নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মহানির্বাণ ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ’ (সিআরজি) ও ‘নো ইয়োর নেবার’ আয়োজিত সভায় অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে কত জন মানুষ ভিন্-রাজ্যে জীবিকার জন্য যাচ্ছেন? সরকারি ভাবে সংখ্যাটা প্রায় ২২ লক্ষ। অনেকে বলছেন তা প্রায় ৪০ লক্ষ। কোনটা ঠিক? পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য থাকতে হবে।” সমাজতত্ত্ববিদ রণবীর সমাদ্দার মনে করেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণ হলে, তবেই সরকার কিছু করে। পাশাপাশি, ১৯৭৯-র ‘আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইনে’র কথা উল্লেখ করে রণবীর বলেছেন, “আইনটি তৈরির নেপথ্যে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির আন্দোলনের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু কিছু দাবি-দাওয়া জানানো ছাড়া কিছু করে না সংগঠনগুলি।”
‘নো ইয়োর নেবার’-এর আহ্বায়ক সাবির আহমেদেরও দাবি, “পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াত নিয়ে তথ্য নেই। শুধুমাত্র কেরল, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড সরকার ‘রাজ্য অভিবাসন রিপোর্ট’ তৈরি করেছে। এটা না থাকলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না।” পরিযায়ী-হেনস্থার ‘উদাহরণ’ দিয়ে ‘আইন লঙ্ঘনে’র অভিযোগ তুলেছেন সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমতা বিশ্বাস। সভায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন আহমেদ হাসান ইমরানের অভিযোগ, “ভোটের আগে ঘৃণা ছড়াতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চান, বিদ্বেষ তৈরি হলে সুবিধা হবে।”
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ তথা পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারপার্সন সামিরুল ইসলামের পাল্টা বক্তব্য, “গ্রাম ধরে তথ্য রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২১ লক্ষ ৬৭ হাজার মানুষ বাইরে কাজ করতে যান। অন্য জায়গা থেকে এখানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কাজ করতে আসেন। ‘কর্মতীর্থ’ পোর্টালে গিয়ে ও অফলাইনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ আছে।”