ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠন হবে না, সংসদে জানিয়ে দিল জলশক্তি মন্ত্রক, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তৃণমূল
আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
ভুটান থেকে উত্তরবঙ্গে নেমে আসা নদীগুলির প্রভাব মোকাবিলায় ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও তৃণমূল। তবে সেই দাবি কার্যত খারিজ করে দিল কেন্দ্র। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক প্রশ্নের জবাবে জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে— ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠন করার কোনও পরিকল্পনা নেই। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সি.আর পাতিল এই জবাব দিয়েছেন।
এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে কমিশন গঠনের অনুরোধ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১৬৯ ধারা মেনে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে রাজ্যের দাবি ছিল, কমিশনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক জন প্রতিনিধি রাখা হোক যাতে নদী সংক্রান্ত সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান বার করা যায়। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে ওই কমিশনে রাখার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতেও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত কমিশন গঠনের বদলে ভুটানের বৃষ্টির জল এবং নদীর জল বেড়ে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের সীমানায় ঢুকে পড়ায় দু’দেশের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তিনটি কমিটির নামও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘জয়েন্ট গ্রুপ অফ এক্সপার্ট’ (জেজিই), ‘জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিম’ (জেটিটি) এবং ‘জয়েন্ট এক্সপার্ট টিম (জেইটি)’— এই কমিটিগুলি বৈঠক করে বন্যা এবং নদীর বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবে।
তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা, বিশেষত আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার প্রতি বর্ষায় ভুটান থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত জলের প্রবাহ ও বন্যাজনিত ক্ষতির মুখে পড়েছে। নদীগুলির অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহে কৃষিজমি, চাষের কাঠামো এবং বসত এলাকা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রসঙ্গে সাংসদ ঋতব্রত বলেন, ‘‘যে সব জায়গার জন্য রাজ্য সরকার ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন তৈরি করতে বলেছেন, সেখানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখন ‘ডিনায়েল মুডে’ রয়েছে। বাংলা ডুবে গেলে ওদের কিছু আসে-যায় না। রিভার কমিশন তৈরি না হলে রায়ডাক, সঙ্কোশ, তোর্সা নদীর জলে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের জায়গাগুলি ডুবে যাবে। তাই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ বিজেপিকেও ডুবিয়ে দেবেন।’’ রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন তৈরি করতে পারে। তৃণমূল সংসদীয় দলের বক্তব্য, রাজ্যের প্রস্তাবকে একেবারে উপেক্ষা করে কেন্দ্র উত্তরবঙ্গবাসীর সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়নি।