• ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবির পরিদর্শনে যাবেন মন্ত্রীরা, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্নে তৈরি জেলাভিত্তিক কর্মসূচি
    আনন্দবাজার | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  • আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই ভোটকে মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয়েছে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। এ বার সেই শিবিরগুলির কার্যকারিতা ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে সরাসরি নামছেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দেন, কে কোন জেলায়, বা এলাকার শিবির পরিদর্শন করবেন। নির্দেশিকা প্রত্যেক মন্ত্রীর হাতে বন্ধ খামে তুলে দেওয়া হয়েছে।

    নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এক জন করে মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক বার সংশ্লিষ্ট এলাকার ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবিরে হাজির থাকতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু উপস্থিতি নয়, শিবিরে জমা পড়া অভিযোগ, আবেদন এবং পরামর্শগুলি কী ভাবে দ্রুত কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে তদারকিও করতে হবে। পাশাপাশি, ব্লক স্তরের সিদ্ধান্তগুলির অগ্রগতি জানতে এবং সমস্যা সমাধানে সমন্বয়সাধন করতে জেলাশাসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন— কোনও মন্ত্রীকেই তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের শিবিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এর উদ্দেশ্য, স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ ভাবে পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে দেওয়া হয়েছে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের শিবিরের দায়িত্ব। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস রয়েছেন হাওড়া সদরের দায়িত্বে, দক্ষিণ কলকাতার শিবিরে যাবেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। যাদবপুর ও ডায়মন্ড হারবার এলাকার শিবিরে যাবেন পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে যাবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, তমলুকে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, কাঁথিতে পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, দমদম-বারাকপুরের শিবিরে যাবেন পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, পশ্চিম মেদিনীপুরে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, বনগাঁয় যাবেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী অরূপ রায়।

    বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে সরকারের একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পে গতি আনা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রীদের সরাসরি শিবিরে পাঠিয়ে সমস্যার সম্মুখীন করানো। যাতে প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে সরকারি নথির ফারাক বোঝা যায়। তৃতীয়ত, আসন্ন ভোটের মরসুমে মানুষের সঙ্গে সরাসরি দলের শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ বাড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি মজবুত করা। রাজ্যের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই দায়িত্ব তাঁদের কাছে একটি সুযোগ, যাতে তাঁরা প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত হতে পারবেন। অন্য দিকে, প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে এবং স্থানীয় সমস্যাগুলি সমাধানের প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন শিবির পরিদর্শনের রিপোর্ট নিয়মিত নবান্নে জমা দিতে। যদি কোনও ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি হয়, তাহলে তা নিয়ম মেনে নথিভুক্ত করতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে।

    সব মিলিয়ে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই শিবিরগুলিতে এখন থেকে মন্ত্রীদের সরাসরি উপস্থিতি ও নজরদারি সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলিকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রশাসন এবং মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে এই পদক্ষেপ কতটা সফল হয়, এখন সে দিকে তাকিয়ে রাজ্যবাসী।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)