বন দফতরে বার বার আবেদন জানিয়েও সুরাহা হয়নি। ক্ষতিপূরণের দাবিতে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলেন কুলতলির চার বাঘ-বিধবা। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন বন্দনা মাইতি, দুর্গারানি মণ্ডল, ভগবতী হালদার এবং সুলতা জানা।
সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রায়ই বাঘের মুখে পড়েন মৎস্যজীবীরা। বাঘের হানায় কোনও মৎস্যজীবীর মৃত্যু হলে প্রশাসনের তরফে তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক গাফিলতিতে সেই ক্ষতিপূরণ মেলে না। নানা অজুহাতে গরিব পরিবারগুলির টাকা আটকে রাখে বন দফতর।
এরই প্রতিবাদে বছর দু’য়েক আগে কুলতলির বাঘ-বিধবা শান্তিবালা নস্কর হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। হাই কোর্ট দ্রুত তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ পান শান্তিবালা। তারপর থেকে আরও বেশ কিছু পরিবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করে এনেছেন। একটি মামলার রায়ে বিচারপতি স্পষ্ট জানান, জঙ্গলে বাঘের হামলায় মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। কোর বা বাফার এলাকা দেখা চলবে না।
কিন্তু অভিযোগ, তারপরেও নানা টালবাহানায় ক্ষতিপূরণ আটকে রাখছে বন দফতর। মৈপীঠের পূর্ব গুড়গুড়িয়াগ্রামের বাসিন্দা বন্দনা মাইতি জানান, ২০১০ সালে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তাঁর স্বামী। তারপর থেকে বিডিও, বন দফতর, স্থানীয় নেতাদের কাছে বার বার গিয়েছেন। কাজের কাজ হয়নি। ২০১১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে কিশোরীমোহনপুরের সুলতা জানাও প্রশাসনের দফতরে বহু ঘুরেছেন। কাজ হয়নি। ওই গ্রামেরই দুর্গারানি মণ্ডলের স্বামীর মৃত্যু হয় ২০২১ সালে। তারপর থেকে একাধিক বার বিভিন্ন দফতরের চক্কর কেটেও হতাশ হতে হয়েছে। গোপালগঞ্জের ভগবতী হালদারের স্বামীর মৃত্যু হয় ২০২৪ সালে। তিনিও ক্ষতিপূরণ পাননি। ভগবতী বলেন, “চারটে ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসার, তার মধ্যে দু’জন প্রতিবন্ধী। নিজেও একটি চোখে দেখতে পাই না। কোনও রকমে সংসার চলছে। ক্ষতিপূরণের টাকাটা পেলে কিছুটা সুরাহা হত। কিন্তু বার বার আবেদন নিবেদন করেও টাকা মেলেনি।”
আইনি লড়াই লড়ে অধিকার ছিনিয়ে আনতে এই বাঘ বিধবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠন সূত্রের খবর, বাঘ-বিধবাদের হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে হাই কোর্টে লড়বেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত এবং শ্রীময়ী মুখোপাধ্যায়। এপিডিআর-এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল বলেন, “প্রতি বছর গড়ে ২০ জন মৎস্যজীবী বাঘের হানায় আহত বা জখম হচ্ছেন। অথচ, বন দফতর প্রায় কাউকেই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। দিন কয়েক আগে বন দফতরের এক অস্থায়ী কর্মী গ্রামে ঢুকে পড়া বাঘ ধরতে গিয়ে চোখ হারালেন। তাঁকেও ক্ষতিপূরণ দেয়নি প্রশাসন। তাই প্রত্যন্ত এলাকার গরিব পরিবাগুলিকে বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, দুর্ঘটনার সাত দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিক বন দফতর। পাশাপাশি মানবিক দিক থেকে পারিবারিক পেনশন ও শিশুদের পড়াশোনারও দায়িত্ব নেওয়া হোক।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের এক আধিকারিক জানান, আবেদনের ভিত্তিতে কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে নথিতে সমস্যা থাকলে দেরি হয়।