শহিদ ক্ষুদিরামের ফাঁসির নথি এবার প্রকাশ্যে, পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষণের নির্দেশ মমতার
প্রতিদিন | ১৩ আগস্ট ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: ‘ত্রৈলোক্যনাথ বসুর পুত্র ক্ষুদিরাম বসুকে তাঁর অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় প্রাণদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সেশন কোর্ট যে ট্রায়াল করেছিল এবং যে রায় দিয়েছিল, তা বহাল রেখে আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করা হচ্ছে।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসেছে ফোর্ট উইলিয়ামে বেঙ্গল হাই কোর্টের রায়ের সেই ঐতিহাসিক নথি। সেখানেই বীর বিপ্লবী শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির রায়ের এই উল্লেখই রয়েছে। অথচ ভাষা সন্ত্রাসীরা ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। হিন্দি সিনেমায় ক্ষুদিরাম বসুকে বলা হয়েছে ক্ষুদিরাম সিং! বাংলার কিশোর বিপ্লবীকে বলেছে পাঞ্জাবের ছেলে! এর বিরুদ্ধে সোমবার ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিনে বিজেপিকে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবারই ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির রায়ের নথি হাতে আসে মুখ্যমন্ত্রীর। সেই আত্মবলিদানের দলিল দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চান, ক্ষুদিরাম বসুকে ভাষা সন্ত্রাসীদের এমন অপমানের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক বাংলা। বঙ্গবাসীর প্রতিবাদ ধ্বনিত হোক গোটা দেশে। সূত্রের খবর, এই ঐতিহাসিক নথিটি পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার বিপ্লবীদের একটি উজ্বল অধ্যায়কে সামনে থেকে দেখতে পারেন দেশের মানুষ। সরকারি এই নথিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটিশ শাসকের পক্ষে হাই কোর্টের দুই বিচারপতি ১৯০৮ সালের ১৩ জুলাইয়ের রায়ে ক্ষুদিরাম বসুর আপিল খারিজ করেন। শহিদ ক্ষুদিরামের ফাঁসির নথি এবার প্রকাশ্যে, পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষণের নির্দেশ মমতার সাজাই বহাল রাখছেন।
অথচ, সিনেমায় অগ্নিযুগের সেই ইতিহাসে ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানকে যেন কিছুটা খাটো করেই দেখানো হয়েছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। তাঁদের যুক্তি, না হলে কেন ক্ষুদিরাম বসুর পদবি পরিবর্তন করে দেওয়া হবে? কেনই বা তাঁকে পাঞ্জাবের ছেলে বলে উল্লেখ করা হবে। তাহলে কি বাংলার বীর বিপ্লবীদের সংগ্রামের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে ভাষা সন্ত্রাসীরা। আরও বেশি করে সেই প্রশ্ন উঠছে কারণ, সম্প্রতি সময়ে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা বললেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। ধরানো হচ্ছে এনআরসি-র নোটিস। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দেশের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে যাঁদের অবদান সব থেকে বেশি, সেই বাঙালির আত্মদানকে বিকৃত করা হচ্ছে। চূড়ান্ত অপমান করা হচ্ছে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদেরও। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ‘সিং’ বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা? আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে দেখানো হয়েছে পাঞ্জাবের ছেলে হিসাবে। অসহ্য!’’
ইতিহাসবিদরা মনে করাচ্ছেন, ব্রিটিশ জমানায় পরাধীন ভারতের মজফফরপুরে বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকিকে সঙ্গে নিয়ে বোমা ছোড়েন অনুশীলন সমিতির কিশোর ক্ষুদিরাম বসু। কিংসফোর্ডের বদলে এই ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই ব্রিটিশ মহিলার। ধরা পড়ার মুখে নিজের রিভলভারের গুলিতে আত্মঘাতী হন প্রফুল্ল চাকি। গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম বসু। শুরু হয় বিচার। ফাঁসির আদেশ শোনানো হয় তাঁকে। ১৯০৮ সালেরই ১১ আগস্ট ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করেন বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। অথচ, তাঁর এই আত্মবলিদানের কথা ভুলিয়ে দিতে চাইছে ভাষা সন্ত্রাসীরা। ইতিহাসবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারও ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির কোনও প্রতিবাদ করেনি। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েই এমন কাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন। এবার সেই ফাঁসির রায়ের ঐতিহাসিক নথিটিও তিনি তুলে ধরতে চান বাংলার মানুষের সামনে।