• রাজনীতির ‘কু–কথা’ নিয়ে প্রতিবাদ পুলিশের স্ত্রীদের
    এই সময় | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ–খুনের ঘটনার পরে কখনও টার্গেট হয়েছেন কলকাতার সিপি, আবার কখনও নিশানায় নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। সেই রেশ এখনও চলছ। তখনকার সিপি বিনীত গোয়েল সরে যাওয়ার পরে বর্তমান পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাও টার্গেট হয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের। তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না নাগরিক আন্দোলনের লোকজনও। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশকর্মীদের স্ত্রীরা সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিবাদে সরব হলেন। পুলিশের উদ্দেশে কু-কথায় কী ভাবে লাগাম টানা যায়, তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে লালবাজারও। পরামর্শ নেওায়া হচ্ছে আইনজ্ঞদের।

    গত ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানের সময়ে সরাসরি মনোজ ভার্মার নামে কু-কথার বন্যা ছোটাতে শোনা গিয়েছে বিজেপির এক নেতাকে। পুলিশকে আরও এক নেতাও গালিগালাজ করেন। কলকাতা পুলিশের ফেসবুক এবং এক্স হ্যান্ডলে আরজি কর সংক্রান্ত যে কোনও পোস্টে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না সাধারণ মানুষও। ধর্ষিত–নিহত চিকিৎসকের মাকে পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগ প্রচার হতেই আরও কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে লালবাজারকে। কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। প্রয়োজনে মানহানির মামলাও করতে পারেন তাঁরা।

    এই পরিস্থিতিতেই ‘রাজনীতির ভাষা সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হয়েছেন পুলিশ পরিবারের মহিলারা। বিজেপি নেতৃত্বের একের পর এক অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে গান্ধী মূর্তির দিকে মিছিল করেন পুলিশকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি—সুরক্ষা দেওয়া পুলিশেরই আজ মান-সম্মান নেই।

    প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ পরিবারের একাধিক সদস্য জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পরিকল্পিত ভাবে পুলিশকে টার্গেট করা হচ্ছে। অশ্রাব্য ভাষা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকী হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এক পুলিশকর্মীর স্ত্রী সালমা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা স্কুলে, কলেজে যায়। সহপাঠীদের কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কেন এই আক্রমণ? কেন পুলিশের পরিবারকে টার্গেট? এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।’ রাজ্য পুলিশে কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী প্রিয়া মণ্ডলের কথায়, ‘নবান্ন অভিযানে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে যে ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা রীতিমতো লজ্জাজনক। পুলিশের ভাইকে মারার চেষ্টা হয়েছে। রক্ষাকবচের আড়ালে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন পুলিশকে আক্রমণ করা হচ্ছে।’

    পুলিশ পরিবারের আরও এক সদস্য বলেন, ‘রাস্তায় ডিউটি করা স্বামী বা ভাইকে শুনতে হচ্ছে—বৌকে বিক্রি কর, মাকে বিক্রি কর। এর প্রতিবাদ না করে থাকা যায় না।’ সম্প্রতি বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধেও পুলিশের পরিবার নিয়ে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারান এক পুলিশকর্মীর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ওঁর বিরুদ্ধে কেস হয়েছে, ক্ষমাও চেয়েছেন। আমরা তখনই প্রতিবাদ করেছি। তদন্ত চলছে।’ সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশকর্মীদের পরিবারের বার্তা, দলমত-নির্বিশেষে রাজনীতির ভাষায় শালীনতা বজায় রাখা জরুরি। পুলিশের পেশাগত দায়িত্বকেও সম্মান করা প্রয়োজন।

  • Link to this news (এই সময়)