পুজোয় রাস্তার ডিভাইডারে হোর্ডিং নয়, কড়া পুরসভা, দশমীর ৭ দিন পরও হোর্ডিং না খুললে জরিমানার সিদ্ধান্ত
বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এবার পুজোয় রাস্তার ডিভাইডার, দু’টি লেনের মধ্যে থাকা রেলিং বা মিডিয়ান স্ট্রিপে বিজ্ঞাপনের কোনও হোর্ডিং লাগানো যাবে না। সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি ব্যানার বা হোর্ডিংয়ে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির নাম থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুজোর পর বিজ্ঞাপন কতদিনের মধ্যে খুলে ফেলা বাধ্যতামূলক, সেই সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে পুরসভা। দশমীর পর সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে পুজোকেন্দ্রিক সব অস্থায়ী বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলতে হবে। নিয়ম না মানলে গুনতে হবে মোটা টাকা জরিমানা। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভায় একটি বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। সেখানেই এই সিদ্ধান্তগুলি হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘নতুন বিজ্ঞাপন নীতির সমস্ত নিয়ম এ বছর থেকেই চালু হচ্ছে।’
এদিন পুরসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এবার থেকে রাস্তার মিডিয়ান স্ট্রিপ বা ডিভাইডারে কোনও বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং লাগাতে দেওয়া হবে না। কোনও পুজো কমিটি বা বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থা এরপরও হোর্ডিং-ব্যানার লাগালে তা বেআইনি বলে গণ্য করে পুরসভা ভেঙে দেবে। কিন্তু কেন এই বিধি-নিষেধ? পুর-আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, রাস্তার মাঝে বিজ্ঞাপন লাগানোর কাঠামো তৈরি হলে চালক, পথচারীদের ট্রাফিক সিগন্যাল লক্ষ্য করতে সমস্যা হয়। পুজোর সময় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের চাপ সামলাতে হয় পুলিসকে। মূলত ট্রাফিক সিগন্যালের সমস্যার কারণেই রাস্তার ডিভাইডারে কোনও বিজ্ঞাপনে লাগানোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া মিডিয়ান স্ট্রিপে বিজ্ঞাপনের কাঠামোর জন্য বাঁশ পোঁতা হলে সেখানকার গাছ নষ্ট হয়। তাই সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত।
রাস্তার ধারে বাঁশের যে কাঠামো বানিয়ে পুজোর বিজ্ঞাপন লাগানো হয়, সেক্ষেত্রেও কাঠামোর নির্দিষ্ট উচ্চতা মানার ক্ষেত্রে এবার কড়াকড়ি করা হচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, পুজোর সুযোগ নিয়ে বহু বেআইনি বিজ্ঞাপন লাগানো হয় শহরের যত্রতত্র। এই ধরনের অবৈধ বিজ্ঞাপন রুখতেও এবার কঠোর হচ্ছে পুরসভা। প্রত্যেকটি পুজোর বিজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির নাম থাকা বাধ্যতামূলক। না হলে সেই বিজ্ঞাপনও বেআইনি বলে গণ্য হবে। সেগুলি নষ্ট করে দেবে পুরসভা। পুজোর সময়ের বিজ্ঞাপনে সরকার যে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, মিলবে না সেই ছাড়ও। পুরসভার বিজ্ঞাপন বিভাগ জানাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থাগুলিকে নিয়ে পুজোর বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বৈঠক হবে। তাঁদের বলে দেওয়া হবে, মহালয়ার সাত দিন আগে থেকে বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে। দশমীর পর সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে সেই বিজ্ঞাপন খুলে ফেলতে হবে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘গত দু’বছর ধরে পুজোর শেষে বিজ্ঞাপনগুলি খুলে ফেলার ক্ষেত্রে কঠোর হয়েছে পুরসভা। যেসব সংস্থা নির্দেশ পাওয়ার পরেও বিজ্ঞাপন খোলেনি, তাদের থেকে মোটা টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’ পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত বছর প্রায় ১৫০০ পুজোর বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং খোলা হয়েছিল। ৭৫টি এজেন্সি বা বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থাকে জরিমানা করা হয়েছিল। এক-একটি সংস্থার থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়। এবছর সেই জরিমানার অঙ্ক বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন অফিসাররা।