পথকুকুরদের সরানোর নির্দেশ 'অযৌক্তিক', মত অ্যাক্টিভিস্টদের, বিকল্প কী?
আজ তক | ১৩ আগস্ট ২০২৫
পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে যে, কেউ এই প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে আদালত অবমাননার মামলা হবে। প্রয়োজনে বিশেষ বাহিনী গঠন করে এই অভিযান চালাতে হবে।
কেন এই পদক্ষেপ?
গত ২৮ জুলাই দিল্লির পূঠ কলান এলাকায় ছয় বছরের ছবি শর্মার মৃত্যুতে শোরগোল পড়ে যায়। অভিযোগ, ৩০ জুন এক কুকুর তাকে কামড়ায়। ২৬ জুলাই চিকিৎসার পরও তার মৃত্যু হয়।
এর পর শীর্ষ আদালত ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে এই বিষয়ে সুও মোটো মামলা গ্রহণ করে। শহর ও শহরতলিতে কয়েকশো কুকুর কামড়ানোর ঘটনা আদালতের নজরে আসে।সোমবারের নির্দেশ সেই মামলারই প্রেক্ষিতে।
পশ্চিমবঙ্গেও কি এই নির্দেশ?
আপাতত তেমন কোনও নির্দেশ নেই। তবে দিল্লির মতো কি কলকাতাতেও কোনওদিন এই নীতি নেওয়া হতে পারে? আশঙ্কা করছেন অনেকই। কলকাতার প্রাণী অধিকার কর্মীরা মনে করছেন, নির্বীজকরণ ও টিকাকরণের সঠিক উদ্যোগ নিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কলকাতার অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার কর্মী দময়ন্তী সেন বলেন, ‘অ্যান্টি রেবিস টিকা খুব জরুরি। আর সরকারি উদ্যোগে যথাযথ স্টেরিলাইজেশন প্রোগ্রাম থাকলে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ তাঁর মতে, দিল্লিতে ৩ লক্ষ কুকুর আছে। এত কুকুরের বিপুল পরিমাণে আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা বাস্তবে অসম্ভব।
অবশ্য অনেকে আদালতের এই রায়কে সমর্থনও জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, শিশু ও পথচারীদের সুরক্ষার্থে রাস্তায় কুকুরের সংখ্যা কমানো উচিত। তবে দময়ন্তী বলছেন, 'স্টেরিলাইজেশন করে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত টিকাকরণ করানো হলেই এই সমস্যাগুলি এড়ানো সম্ভব। তবে যতই যাই করা হোক, সমাজে কুকুরদের অপছন্দ করেন, এমন কিছু মানুষ তো থাকবেনই।'
শহরে পথকুকুরদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'ফারফোক্স' চালান এস কে বাসিত। তিনিও একই কথা বললেন। তাঁরও মতে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ মাত্র ৬ সপ্তাহে বাস্তবায়ন অসম্ভব। বরং নিয়মিত নির্বীজকরণ এবং ভ্যাকসিনেশনেই জোর দিলেন তিনি। কারণ হিসাবে বললেন, 'নির্বীজকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ কুকুরের নির্বীজকরণের মাধ্যমেও আগ্রাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব।' সবশেষে বললেন, 'কুকুররা যুগ যুগ ধরে মানুষের সঙ্গেই সহাবস্থান করেছে। নয় তো তারা জঙ্গলেই থাকতে পারত। মানুষ কুকুর পরস্পরের সঙ্গে নির্ভরশীল ছিল। এটাই বাস্তব।'
তীব্র বিতর্ক
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাণী অধিকার কর্মী মেনকা গান্ধী বলেন, দিল্লিতে ৩ লাখ কুকুর আছে। তাদের সরাতে গেলে ৩,০০০ আশ্রয়কেন্দ্র লাগবে। খরচ হবে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। ‘এত টাকা কি দিল্লির কাছে আছে?’ প্রশ্ন তাঁর।
পিপল ফর দ্য এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালসের (PETA) মিনি আরাভিন্দন জানান, ‘এতে কুকুর ও মানুষেরই বিশাল সমস্যা তৈরি হবে।’ পেটার শৌর্য আগরওয়াল বলেন, 'দিল্লি ২৪ বছরে সব কুকুরের নির্বীজকরণ করে উঠতে পারেনি। সেখানে এত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করাটা অসম্ভব।'
অভিনেতা জন আব্রাহাম বলেন, ‘দিল্লির কুকুরও দিল্লিবাসী, মানুষ তাদের ভালোবাসে।’
রাহুল গান্ধী এক্স-এ লিখেছেন, ‘এটি মানবিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক নীতির বিরুদ্ধাচারণ।’ তাঁর মতে, শেল্টার, নির্বীজকরণ, টিকাকরণ ও কমিউনিটি কেয়ার, এই চারটি মিলিয়েই সুরক্ষা সম্ভব।
আপাতত ছয় সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরে কাজ কতদূর এগোল, তার রিপোর্টও জমা দিতে হবে আদালতে। এই অল্প সময়ে সরকার ও পুরসভা ঠিক কী করে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।