বিভাস ভাট্টাচার্য: প্রতি কামরায় একজন করে টিকিট চেকার। তাঁদের সতর্ক চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে কামরায় যাত্রীদের দিকে। ট্রেন ছাড়ার আগে থেকেই তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন দরজার সামনে। অনুরোধ করছেন, টিকিট না থাকলে যেন কেউ ট্রেনে না ওঠে। ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে তাঁদের কাজ। এগিয়ে আসছেন যাত্রীদের দিকে। দেখতে চাইছেন টিকিট। যদিও এত কিছু করেও সোমবার প্রথমদিন বাণিজ্যিকভাবে শিয়ালদহ-রানাঘাট এসি লোকাল ট্রেন যাত্রা শুরু করার পর তাঁদের নজর এড়িয়ে উঠে পড়েছিলেন চার থেকে পাঁচজন বিনা টিকিটের যাত্রী। একেবারেই অল্প পরিমাণ জরিমানা আদায় করার পর তাঁদের সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছে রেল।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বারো কামরা বিশিষ্ট এই এসি লোকাল ট্রেনে মোট টিকিট চেকারের সংখ্যা ১২ জন। তাঁদের পরিচালনা করছেন ডেপুটি এসএম প্রবীর চক্রবর্তী। সঙ্গে থাকছেন আরপিএফের পুরুষ ও মহিলা কর্মীরা। যদিও রেলের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বিনা টিকিটের যাত্রীদের থেকে জরিমানা আদায়ের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির। শিয়ালদহ ডিভিশনের সিনিয়র জন সংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল যাত্রীদের মধ্যে টিকিট কাটা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি। কারণ এই ট্রেন তাঁদের জন্যই। তাঁরা যদি এবিষয়ে এগিয়ে না আসেন তাহলে এই প্রচেষ্টা সফল হবে না। সেজন্যই সোমবার বিনা টিকিটের যাত্রী ধরা পড়ার পর তাঁদের থেকে সবথেকে কম পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে।'
সোমবার প্রথম যাকে রানাঘাট থেকে শিয়ালদহমুখী এসি ট্রেনে টিকিট চেকার বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি রোশন সিং নামে এক যুবক। রেলের কয়েকজন আধিকারিকের ধারণা, ওই ব্যক্তি ইচ্ছা করেই 'বিখ্যাত' হওয়ার জন্য টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠে পড়েছিলেন। কারণ, ধরা পড়ার পর তিনি যথেষ্টই হাসিখুশি ছিলেন এবং জরিমানার টাকাও বিনা বাক্যব্যয়ে মিটিয়ে দেন। এছাড়াও রেল আরও কয়েকজনকে এসি লোকালের বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের সকলের থেকেই সবচেয়ে কম পরিমাণ জরিমানা আদায় করে সতর্ক করা হয়েছে। পরিহাস করে রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের থেকেও এসি ট্রেনে চেকারের সংখ্যা বেশি।
তবে রেলের এক আধিকারিকের দাবি, এসি লোকাল ট্রেন নিয়ে যাত্রীরা যথেষ্টই উৎসাহিত। আসন সংখ্যা ১১২৫ হলেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও বহু যাত্রী যাত্রা করছেন। অন্যান্য লোকাল ট্রেনের মতো এসি লোকাল ট্রেনের দুটি কামরা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি কামরায় বসানো হয়েছে ৩০ টনের এসি মেসিন। নজরদারির জন্য গোটা ট্রেনটি মোড়া হয়েছে সিসি ক্যামেরায়। আছে গার্ড ও ট্রেন চালকের সঙ্গে আপৎকালীন প্রয়োজনে কথা বলার জন্য 'টক ব্যাক' সিস্টেম। গোটা ট্রেনের 'বডি' নির্মাণ করা হয়েছে স্টিল বা ইস্পাত দিয়ে। যাত্রীদের মালপত্র রাখার জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে গোটা ট্রেনেই যাতায়াত করা যাবে 'ভেস্টিবুল'-এর মাধ্যমে। ট্রেনের দরজা খোলা বা বন্ধ হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। মেট্রো রেলের মতো। চালক ও গার্ড এই বিষয়টি পরিচালনা করবেন।