• রাতে ঘুমের সময়েই ঘরে ঢুকল জল, পড়িমড়ি করে বাইরে এসে দেখলেন নদী গিলে নিল গোটা বাড়ি...
    আজকাল | ১৩ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েক দিনে রাজ্য জুড়ে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও  মুর্শিদাবাদ জেলায় ফরাক্কা ব্যারেজের কাছে গঙ্গা নদীর জলস্তর হু হু করে বেড়ে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার নতুন রেকর্ড তৈরি করার পর সোমবার গভীর রাত থেকে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লকের চাচন্ড এলাকায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। একই সঙ্গে ফরাক্কা, সুতি এবং সামশেরগঞ্জের প্রচুর নিচু এলাকায় গঙ্গা নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে। এর ফলে জলবন্দি হয়ে পড়েছে প্রচুর পরিবার। ফরাক্কা এবং সামশেরগঞ্জের বেশ কিছু পরিবারকে ইতিমধ্যেই  নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। 

    গঙ্গা নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের নিমতিতা , চাচন্ড , শিবপুর-সহ একাধিক এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ওই  সমস্ত এলাকায় রাজ্য সরকার বর্তমানে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু তারই মধ্যে গঙ্গা নদীর জল বাড়ার কারণে  সোমবার গভীর রাত থেকে উত্তর চাচন্ড -মিস্ত্রীপাড়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গতকাল রাতে যখন গ্রামের বাসিন্দারা ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময়  কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই  প্রায় ১০ মিটার জমি নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। এর ফলে রাতের অন্ধকারে ওই গ্রামের পাঁচটি বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে।গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় দশটি পরিবার। 

    চাচন্ড পঞ্চায়েতের প্রধান ফিরদৌসী খাতুন বলেন, 'গতকাল রাতে গ্রামের বাসিন্দারা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় হঠাৎ করেই নদী ভাঙন শুরু হয়। কেউ কিছু বোঝার আগে একের পর এক বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে যেতে শুরু করে।' সূত্রের খবর, গৃহস্থরা যখন ঘর থেকে জিনিসপত্র সরানোর জন্য ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় একটি বাড়ির গোয়ালঘর নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় কয়েকটি গৃহপালিত পশুও নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। 

    পঞ্চায়েত প্রধান জানান ,'চাচন্ড  ছাড়া নিমতিতা এবং বোগদাদনগরের বেশ কিছু গ্রামে  গঙ্গার জল ঢুকতে শুরু করেছে।' গৃহহীন পরিবারগুলোকে আজ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে খাবার দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। গৃহহীন পরিবারগুলো আপাতত নিজেদের আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন।  অন্যদিকে ফরাক্কা ব্যারেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে গঙ্গা নদীর বিপদসীমা ৭৩ ফিট। তবে মঙ্গলবার সকালে নদীর 'আপ স্ট্রিমে' জলের উচ্চতা ছিল ৮০.১০ ফুট এবং 'ডাউন স্ট্রিমে' জলের উচ্চতা ছিল ৭৮.৯৫ ফুট। গতকাল ফরাক্কা ব্যারেজের  'আপ স্ট্রিমে' জলের উচ্চতা ছিল ৭৯.৮৫ ফুট এবং'ডাউন স্ট্রিমে' জলের উচ্চতা ছিল ৭৮.৭৫ ফুট। 

    সূত্রের খবর বিহার এবং উত্তর প্রদেশ  থেকে বন্যার জল গঙ্গা নদী বেয়ে নিচে নেমে আসতে থাকায়  মুর্শিদাবাদ জেলায় নদীর জলস্তর বাড়ছে। সামশেরগঞ্জের পাশাপাশি গঙ্গা নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে ফরাক্কার বিভিন্ন এলাকায়। গঙ্গা নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে গতকালই মহাদেবনগরে  গঙ্গা এবং বাগমারী নদী মিশে গিয়েছে। তার ফলে বিভিন্ন এলাকা নতুন করে জলে ডুবেছে। প্রশাসনের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। 

    ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'এবছর এপ্রিল মাস থেকে রাজ্য জুড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে।বর্তমানে ঝাড়খন্ড এবং বিহার থেকে বন্যার জল নেমে আসছে। তারপরে ফরাক্কা থেকে সামশেরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে জল ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে।' তিনি জানান,' মহাদেবনগর, হোসেনপুর, শিকারপুর,নিমতলা-সহ আরও কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যে কিছু পরিবারকে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যত্র সরানো হয়েছে এবং সেই  সমস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল এবং খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।' তৃণমূল বিধায়ক আরও বলেন,' মহেশপুর, বেওয়া-১  , ডিয়ার ফরেস্ট , মুসকিনগর , বটতলা, সাঁকোপাড়া, বেনিয়াগ্রাম ,হোসেনপুর ,পারদেওনাপুর , খাসপাড়া-সহ আরও কয়েকটি এলাকায় গঙ্গা নদীর জল ঢুকছে। ওই সমস্ত এলাকায় মানুষের যাতায়াতের জন্য ইতিমধ্যেই নৌকা এবং ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
  • Link to this news (আজকাল)