• স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে ব্যাঙ্ক ডাকাতি, নকশালপন্থী অনন্ত ছিলেন পুরসভাতেও
    প্রতিদিন | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম জীবনে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। ধরা পড়ে সেলুলার জেল। দেশ স্বাধীন হলে কলকাতায় ফিরে গাড়ির ডিলারশিপ। দু’হাতে উপার্জন। দেদার অর্থ, নাম, যশ। কয়েক বছরের মধ্যে সব ছেড়ে তিনটি বাংলা ছবি প্রযোজনা করেন। তার মধ্যে একটি, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ। এখনও সুপার ডুপার। তিনটি ছবির কাজে উত্তরবঙ্গ ঘুরে ফিরে এলেন কলকাতায়। কিন্তু আর খোঁজ নেই। দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা দেখে চরম হতাশ হয়ে এবার অন্য এক অনন্ত সিংহ। চরম বামপন্থী (নকশালপন্থী) সংগঠনের সঙ্গে মিশে গেলেন।

    কলকাতা পুরসভার রেকর্ড রুমে থাকা তথ‌্য বলছে, লালবাজারের পুলিশ অফিসার রুণু গুহনিয়োগী তাঁকে গ্রেপ্তার করতে দিনের পর দিন কলকাতা পুরসভার কেন্দ্রীয় ভবনে পড়ে থাকতেন। রয়েছে রুণু গুহনিয়োগীর আত্মজীবনী, ‘সাদা আমি, কালো আমি’। পুরসভার রেকর্ড রুমে ডাঁই করা বস্তাবন্দি কাগজ, নথি প্রায় হলুদ। চেপে ধরলে ঝরঝর করে পড়ে। সেই নথি আতশ কাচের তলায় ফেলে এখন দেখা হচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, চরম নকশাল আন্দোলন যুক্ত অনন্ত সিংহ পূর্ব ভারত আর কলকাতায় একের পর এক সরকারি ব্যাঙ্ক লুঠ করেছিলেন। কিন্তু একবারের জন্য তাঁর নাগাল পায়নি লালবাজার। তথ্য বলছে, পুরসভার বিভিন্ন বিভাগে তাঁকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে দেখা গিয়েছে। কে তাঁকে নিয়োগ করেছে? আবার কীভাবে তিনি অন্য বিভাগে বদলি হলেন, এখনও পর্যন্ত একটা ক্ষীণ সূত্রও পাওয়া গেল না! যেন এক মস্ত ধাঁধার মতো ছিলেন অনন্ত সিংহ।

    যে সময়ে ডাকাতি হচ্ছে তার আগে বা পরে অনন্ত পুরসভার ঠিকা কর্মী। কাজেই অভিযোগ থাকলেও দুঁদে পুলিশ কর্তারা তাজ্জব। কোনও ব্যাঙ্ক লুঠ করার আগে নিজে নাকি ভালো করে গোটা এলাকা দেখে আসতেন। ব্যাঙ্ক থেকে থানার দূরত্ব কত? যদি পুলিশ চলে আসে কোন পথে পালাতে হবে? হাঁটা পথে আর ট্রাম বা বাসে গেলে কতটা নিরাপদ? এমন সব ধরনের সময় ধরে অঙ্ক কষে ব্যাঙ্ক লুঠের ব্লু প্রিন্ট নিজেই কষে দিতেন। আবার ব্যাঙ্ক লুঠ হচ্ছে, প্রায় একই সময়ে ঠিকা কর্মী হিসাবে পুরসভার কাজ করছেন তিনি। অনন্তর নিজের লেখা একটা বইও রয়েছে। বস্তুত স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা স্বাধীনতা উত্তর কলকাতা, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী ছোট লাল বাড়ি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)