খাস কলকাতায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের খোঁজ মিলল। গত ৯ অগস্ট ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক বৃদ্ধের। সোমবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে মশাবাহিত এই রোগের সংক্রমণ কি ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে? রাজ্যে এই মুহূর্তে ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তবে প্রশাসনের অন্দরের খবর, গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম স্বরূপ মুখোপাধ্যায় (৭৫)। দক্ষিণ কলকাতার ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের সানি পার্ক এলাকার একটি আবাসনের ওই বাসিন্দার গত ৪ অগস্ট জ্বর আসে। দু’দিন পরে ডেঙ্গির প্রাথমিক পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। রক্তে প্লেটলেটের মাত্রাও নেমে এসেছিল ৩৫ হাজারে। এর পরেই ৬ অগস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ফের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্লেটলেট ৩০ হাজারে নেমে গিয়েছে। পরের দিন তা আরও কমে ১২ হাজার হয়ে যায় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৯ অগস্ট রাতে মৃত্যু হয় স্বরূপের।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধ যে জ্বরে আক্রান্ত এবং ডেঙ্গির প্রাথমিক পরীক্ষার রিপোর্ট যে পজ়িটিভ এসেছে, তা ৭ অগস্ট জানতে পারেন পুরকর্মীরা। তাঁদের থেকে খবর পেয়ে পুর আধিকারিকেরা পরের দিন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, ওই আবাসন সংলগ্ন আর একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। নিকাশি নালা কার্যত বন্ধ, আবর্জনাও জমে। ওই সমস্ত জায়গায় এডিস মশার লার্ভা মেলে বলেও জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকেরা। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দিলীপ বসু বলেন, ‘‘প্রবীণ ওই ব্যক্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। পুরসভার তরফে নির্মাণকারী সংস্থাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কথা না শুনলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্য দিকে, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চলতি বছরের প্রথমে ডেঙ্গির ততটা প্রকোপ ছিল না। জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্ত হন দেড় হাজার। এক মাসের মধ্যে সেই সংখ্যা লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়। ১৪ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আড়াই হাজার। অর্থাৎ, এক মাসেই এক হাজার আক্রান্ত বেড়েছিল। এখন সেই সংখ্যা তিন হাজার পার করেছে বলে সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের মোট ১৬টি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তালিকায় মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া, মালদহ, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং স্বাস্থ্য জেলা— ডায়মন্ড হারবার ও নন্দীগ্রাম রয়েছে।