• বাইরে গা-জোয়ারি, আড়ালে ‘ভোট চুরি’, সরব কংগ্রেস
    আনন্দবাজার | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় শাসক দলের যোগসাজশে কী ভাবে চোখের অন্তরালে ‘ভোট চুরি’ হয়, ধরিয়ে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। আর তার অনেক আগে থেকেই বাংলায় চলে আসছে ভোটের নামে গা-জোয়ারির অভিযোগ। গণতন্ত্রে এই সামগ্রিক ‘প্রহসন’কে সামনে রেখে এ রাজ্যে সরব হল প্রদেশ কংগ্রেস। তারই পাশাপাশি, ‘ভোট চুরি’র প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিল্লিতে রাহুল-সহ বিরোধী শিবিরের সাংসদদের যে ভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে, তার প্রতিবাদে পথে নামারও ডাক দিল তারা।

    কর্নাটকে ভোটার তালিকা ধরে ‘ভোট চুরির প্রমাণ’ দেখিয়েছিলেন রাহুল। তাঁর সেই সাংবাদিক সম্মেলন দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে দেখিয়ে সব রাজ্যে প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে এআইসিসি। প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে সোমবার রাহুলের এই অভিযোগ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশিই বাংলার প্রসঙ্গও এসেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, ‘‘এই রাজ্যে অনেক দিন ধরেই নির্বাচনে বেনিয়ম চলছে। আগের সরকারের আমলেও হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের জমানাতেও সেই ধারা চলছে। মৃত ভোটার এসে ভোট দিয়েছে, বহুতল আবাসনে তালা দেওয়া হয়েছে ভোটের দিন, বিরোধী দলের এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছে বা কখনও ভোট-বাক্স ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এগুলো সব চোখের সামনে হয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র বা কর্নাটকে যা হয়েছে, সেটা চোখে দেখা যায় না। অন্তরালের এই চুরি ধরিয়ে দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন রাহুল গান্ধী। আমরা বাইরের গা-জোয়ারি এবং আড়ালের চুরি, দু’টোরই প্রতিবাদ করছি।’’

    দিল্লিতে রাহুলের বাসভবনে ডাকা বিরোধী শিবিরের সাংসদদের নৈশভোজেও ‘ভোট চুরি’র প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে রাহুলের পাশে ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ অভিষেকের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ভূরি ভূরি কারচুপির অভিযোগ আছে সব বিরোধী দলের। এই প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন বলেছেন, ‘‘কোনও এক জন ব্যক্তি নয়, সব বিরোধী দলের নেতা ওই আলোচনায় ছিলেন। বড় কোনও রাজনৈতিক সঙ্কট এলে নানা রকম রাজনৈতিক সমন্বয় হয়। আর আমরা তো বলেইছি, বিজেপির স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল কোনও দল যদি নিজেরাই একই আচরণ করে, আমরা তা হলে প্রতিবাদ করব।’’

    কংগ্রেসের বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব না-দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সেই ’৭৭ সালে পড়ে আছে! ব্যালট বাক্সে ভোট তো প্রায় উঠে গেছে! এখন ভোটে যা কারচুপি হয়, তা কেন্দ্রীয় ভাবে দিল্লির কলকাঠিতে হতে পারে।’’

    দিল্লিতে বিরোধী শিবিরের সাংসদদের হেনস্থার প্রতিবাদে এ দিনই সন্ধ্যায় যুব কংগ্রেসের শাহিনা জাভেদদের ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হয়েছিলেন শুভঙ্কর-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। এই প্রশ্নেই আজ, মঙ্গলবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। পাশাপাশি, নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা চেয়ে প্রতি জেলায় নির্বাচনী দফতরের ( জেলাশাসকের কার্যালয়) সামনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও কাঠগড়ায় তুলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও এ দিন বলছেন, ‘‘এখানে শাসক দলের মনোভাব ভোটার তালিকায় ভূত ঢুকিয়ে রাখার। তাই নির্বাচন কমিশন বললেও রাজ্য সরকার অভিযুক্ত আধিকারিকদের সরাতে রাজি নয়। কারণ, এই আধিকারিকেরাই শাসক দলের প্রাণ-ভোমরা। কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, সাংবিধানিক বিধি-ব্যবস্থা মেনে সকলের চলা উচিত।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)