• বাংলার কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়লে এক লক্ষ মানুষ কমিশন ঘিরবে! বিজেপির কেউ বাঁচাবে না, হুঁশিয়ারি অভিষেকের
    আনন্দবাজার | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গের কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ মানুষকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির কোনও নেতা তখন বাঁচাতে পারবে না বলেও কমিশনকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

    সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। কিন্তু বিরোধীদের সেই অভিযান মাঝপথেই আটকে দেয় দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে অভিষেক বুঝিয়ে দেন, সোমবারের কর্মসূচি যা ছিল, আগামী দিনে তার চেয়েও বড় প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত তৃণমূল। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, “জোরজবরদস্তি তারা দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। এখন মানুষের ভোটাধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে। আমরা এটা করতে দেব না। কাল যা দেখেছেন, তা সবে শুরু।”

    এর পরেই অভিষেক জানান, যদি পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যায়, তবে বিজেপি যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বাংলার একটা মানুষেরও যদি ভোটাধিকার কাড়ে, তবে এক লক্ষ মানুষ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘিরব। বিজেপির কোনও নেতা বাঁচাবে না।” সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বিজেপি দেশকে ‘রাজনৈতিক সম্পদ’ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে বলেও অভিযোগ তোলেন অভিষেক। বাংলাদেশি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের হেনস্থার অভিযোগেও সরব হন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলার মানুষের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে বিজেপি। রাজ্যবাসীকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বাংলাদেশি বলা হয়েছে। বাংলার মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

    সোমবার নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও কর্মসূচির সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ এবং সমাজবাদী পার্টির এক সাংসদ। গত কালের ঘটনায় দিল্লি পুলিশের ‘বর্বরতা এবং অতিসক্রিয়তার’ বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক। মহিলা সাংসদদের চুলের মুঠি ধরে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। অভিষেক জানান, সোমবার রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন সাংসদ ছিলেন ওই কর্মসূচিতে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অশান্তির কোনও জায়গাই ছিল না। তার পরেও কমিশন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দফতর পর্যন্ত যেতে দেয়নি। তৃণমূল নেতার বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যায় কমিশনের কাছে কোনও জবাব নেই।

    অতীতে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেছিল তৃণমূল। যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ সভা হয়েছিল। সেই সময়েও দিল্লি পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে সরব হয়েছিল রাজ্যের শাসকদল। অভিষেকের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবিতে যন্তর মন্তরে সভার সময় দিল্লি পুলিশ যে ভাবে নিগ্রহ করেছিল, সোমবারও তা-ই হয়েছে।

    নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির মধ্যে আঁতাঁতের তত্ত্বও তুলে ধরেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, কমিশন একটি নিরপেক্ষ সংস্থা। কমিশনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠলে বিজেপি কেন ঢাল হয়ে দাঁড়াবে? কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অভিষেকের কথায়, “তারা (কমিশন) যদি এতটাই নিরপেক্ষ থাকে, তবে সরাসরি সাংসদদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। বিজেপির সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ক্রীতদাস এবং তল্পিবাহকে পরিণত করেছে।”

    পাশাপাশি ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর জন্য কমিশনের কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও কেন কমিশনের কাছে ডিজ়িটাইজ়ড ভোটার তালিকা নেই, তা নিয়েও প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদের। তাঁর আরও প্রশ্ন, বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে কেন জোরজবরদস্তি এসআইআর করা হচ্ছে? অভিষেকের বক্তব্য, যদি কমিশনের যুক্তিমতো মেনে নেওয়া হয় ভোটার তালিকায় গরমিল রয়েছে, তার মানে গত বছরের লোকসভা ভোটও এই গরমিল-সহ ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই হয়েছে। সেই ভোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে যদি ওই ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তা হলে গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারই ইস্তফা দেওয়া উচিত বলে দাবি অভিষেকের। তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা উচিত বলেও জানান তৃণমূল সাংসদ।

    অভিষেকের বক্তব্য, যদি সত্যিই গরমিল থাকে পূর্বের ভোটার তালিকায়, তবে ওই তালিকার ভিত্তিতে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন সকলের পদত্যাগ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবি তোলেন তিনি। তৃণমূল নেতা বলেন, “প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তাঁরা (বিজেপি সাংসদেরা) ইস্তফা দিন। সারা দেশের মানুষ এসআইআরকে স্বাগত জানাবে। আমি আমার কথাও বলছি। বিজেপি শুরু করুক না, আমরা সকলে ইস্তফা দেব। কোনও অসুবিধা নেই। লোকসভা ভেঙে দিয়ে সারা দেশে এসআইআর হোক। তার পরে আবার নির্বাচন হোক।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)