• ছাত্রছাত্রীর অভাবে এক বছর বন্ধ কোদপুরা আদিবাসী মিশন হাই স্কুল, তদন্তের নির্দেশ
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: বেলপাহাড়ীর প্রত্যন্ত গ্ৰাম কোদপুরা। জঙ্গল ঘেরা গ্ৰামটির কোদপুরা আদিবাসী মিশন হাইস্কুল একবছর ধরে বন্ধ। স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই। চারজন শিক্ষক জানলা দরজাহীন খন্ডহর স্কুলবাড়িতে মাঝে মাঝে এসে বসে থাকেন। শোনা যায় না ছাত্রছাত্রীদের কলরব। বন্যজন্তুরা রাত হলে স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নেয়। জেলাশাসক বন্ধ হয়ে যাওয়া সাঁওতাল মাধ্যমের স্কুলটির বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে জেলা শিক্ষাদপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা শিক্ষাদপ্তরের ডিআই শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, জেলাশাসক স্কুলটির নিয়ে দপ্তরকে এনকোয়ারি করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।

    বেলপাহাড়ী চক থেকে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার পথে কোদপুরা গ্ৰাম। গ্ৰামের মধ্যেই স্কুল বাড়িটি নীরবে দাঁড়িয়ে। স্কুল শুরুর ঘণ্টা, শিক্ষকদের গলা,  পড়ুয়াদের কলরব আর শোনা যায় না। টিচার ইন চার্জ সহ তিনজন পার্শ্ব শিক্ষক ফাঁকা স্কুল বাড়িতে এসে মাঝে মাঝে বসে থাকেন। বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষের জানলা দরজা নেই। বেশিরভাগ চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ চুরি হয়ে গিয়েছে। ভাঙাচোরা কিছু চেয়ার, বেঞ্চি শ্রেণিকক্ষে এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে। স্কুল বাড়ির বাইরে পায়াহীন বেঞ্চ রোদে জলে নষ্ট হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের মেঝেয় ধুলোর আস্তরণ। ভাঙাচোরা চেয়ার বেঞ্চের ভিতর থেকে সাপের ফোঁসফোসানি শোনা যায়। ব্ল্যাকবোর্ডজুড়ে মাকড়সার জাল। সন্ধ্যা নামলেই সামনে জঙ্গলঘেরা চাতান পাহাড় থেকে বন্যজন্তুরা দরজা জানলাহীন স্কুলের ফাঁকা ঘরে ঢুকে পড়ে। আশপাশের গ্ৰামের সাঁতালি ভাষাভাষী ছেলেমেয়েরা দীর্ঘপথ পেরিয়ে বেলপাহাড়ী এসসি হাইস্কুল ও ওদোলচুয়ায় পড়তে যায়। কিন্তু এখানে আসে না। 

    এক বছর ধরে স্কুলটি কেন বন্ধ, জেলার শিক্ষাদপ্তরের কাছে তার স্পষ্ট উত্তর নেই। জেলায় সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন হওয়া স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে যখন জোর দেওয়া হচ্ছে। সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। আদিবাসী পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের সুবিধার জন্য হস্টেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে কোদপুরা গ্ৰামের স্কুলটির কেন এমন দশা, সেই প্রশ্ন উঠছে। কোদপুরার গ্ৰামের বাসিন্দা সনাতন হাঁসদা বলেন, করোনার সময় থেকে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। গত বছর থেকে ছাত্রছাত্রী আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকরা মাঝেমধ্যে এসে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষে কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যান। গ্ৰামের স্কুলটির এমন অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। 

    স্কুলের টিচার ইন চার্জ বলেন, স্কুলে আমি ছাড়া তিনজন পার্শ্বশিক্ষক ও একজন ক্লার্ক আছে। ছাত্রছাত্রী না থাকায় গতবছর থেকেই  স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্কুলটি বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। শিক্ষক হিসেবে আমারও খারাপ লাগছে।-নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)